বিয়ের দাবিতে বরিশালের হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন (পশ্চিম) ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক মো. সালমানের বাড়িতে দুদিন ধরে অনশন করছেন এক তরুণী (১৯)। তার দাবি, তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে ওঠেন ওই তরুণী। ঘটনার পর থেকে পালিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা সালমান। খবর পেয়ে ওই বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত বিয়ের দাবিতে ওই তরুণী সেখানেই অবস্থান করছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত মো. সালমান গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষেরচর গ্রামের আক্তার ব্যাপারীর ছেলে এবং গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন (পশ্চিম) ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক।
স্থানীয়রা জানান, ছাত্রলীগ নেতা সালমান ও তরুণীর বাড়ি পাশাপাশি। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার ওই তরুণীর বাড়িতে আপত্তিকর অবস্থায় সালমানকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ফয়সাল ঘটনাস্থলে যান। তিনি সালমানের বাবা আক্তার ব্যাপারীকে সেখানে আসতে বলেন। পরে সালিশ বসে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে আক্তার ব্যাপারী তার ছেলে সালমানের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ের আশ্বাস দেন। পরে ছেলেকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
পরদিন ছেলেকে বাড়ি থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন আক্তার ব্যাপারী। এরপর থেকে তিনি বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিষয়টি জানতে পেরে বৃহস্পতিবার থেকে সালমানের বাড়িতে অনশন শুরু করেন ওই তরুণী।
তরুণীর ভাষ্যমতে, সালমানের সঙ্গে তার দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক। সালমান বিয়ের প্রলোভনে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করেন। এরপর থেকে তিনি বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সালমান রাজি হচ্ছিলেন না। বর্তমানে তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বুধবার রাতেও তার বাড়িতে এসে সালমান শারীরিক মেলামেশা করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি এলাকায় নেই। বাধ্য হয়ে তিনি সালমানের বাড়িতে চলে আসেন। সালমানের পরিবারের লোকজন বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় তিনি অনশন করছেন।
ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘সালমান ও আমার সম্পর্কের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেছে। এখন আমার গর্ভে তার সন্তান। বাড়ি ফেরার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিয়ে না হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার কোনো পথ নেই।’
গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ফয়সাল জানান, উভয় পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা সালমানের বাবা আক্তার ব্যাপারী বলেন, ‘বললেই তো হুট করে বিয়ে দেওয়া যায় না। আয়োজনের বিষয় আছে। আমি মেয়ের পরিবারকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেছি। ছেলে ফিরে এলে তার কাছে সঠিক ঘটনা জানা যাবে। অভিযোগ সত্য হলে ওই মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান করবো।
গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন (পশ্চিম) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হামিম ঘরামী বলেন, সালমান গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়ন (পশ্চিম) ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী। তার সঙ্গে আমার তেমন যোগাযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কর্মকর্তা মো. ইউনুস মিয়া জানান, প্রতারণার বিষয়ে আইন রয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।