আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করতে ১৪ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তাদের অবমুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রধান বিচারিক হাকিমকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতি দুই ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ১৩ জন এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে একজনসহ মোট ১৪ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।
ইসির আইন শাখার সহকারী সচিব মোছা. শাহীনুর আক্তারের পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে—স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর বিধি ৮৬-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন ও বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিধিমালার বিধি ৭২, বিধি ৭৪, বিধি ৭৫, বিধি ৭৬, বিধি ৭৭-এর উপবিধি (১) এবং বিধি ৭৮ এর অধীন নির্বাচনী অপরাধসমূহ দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-এর অধীন আমলে নেওয়া এবং তা সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার সম্পন্নের জন্য ১৪ জন বিচারিক হাকিমকে নিয়োগ প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ১৪ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণের পূর্বের দু’দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দু’দিন অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি, থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট পাঁচ দিনের জন্য প্রথম শ্রেণির হাকিম হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন।
বিচারিক হাকিম নিয়োগের ছক থেকে জানা গেছে, করপোরেশনের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের জন্য মোহাম্মদ বদিউজ্জামান, অতিরিক্ত প্রধান বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডে মো. কাউছার আলম, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে বেগম শামসাদ বেগম, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ শামছুর রহমান, বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডে মো: নূর মহসীন, বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ডে ইমরান মোল্লা, বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ১৩ ও ১৪ নং ওয়ার্ডে কাজী মোহাম্মদ মোহসেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, নারায়ণগঞ্জ; ১৫ ও ১৬ নং ওয়ার্ডে দেলোয়ার হোসাইন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, নরসিংদী; ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডে জমেহেদী হাসান, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, নরসিংদী; ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ডে মো: রাকিবুল হক,বিচারিক হাকিম, নরসিংদী; ২১ ও ২২ নং ওয়ার্ডে মো: মাহমাদুল হাসান খান, বিচারিক হাকিম, নরসিংদী; ২৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডে মানিক দাস, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, মুন্সীগঞ্জ; ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডে আব্দুল্লাহ আল ইউসুফ, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম, মুন্সীগঞ্জ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে ইফতি হাসান ইমরান, বিচারিক হাকিম, মুন্সীগঞ্জকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত হাকিমরা দায়িত্ব পালনকালে কোনো নির্বাচনী অপরাধ বিচারার্থে আমলে নিলে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব আইনের কাছে মেইলে (ds_law@ecs.gov.bd) পাঠাতে হইবে।
এক্ষেত্রে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমের নাম পদবী ও মোবাইল নম্বর, অভিযোগকারীর নাম ও ঠিকানা, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তার নাম ও ঠিকানা, অভিযোগের তারিখ ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং গৃহিত ব্যবস্থার বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।
বিচারিক হাকিমরা দায়িত্ব পালনকালে একজন বেঞ্চ সহকারী/ স্টেনোগ্রাফার/অফিস সহকারীকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তাদের নিজ নিজ অফিস প্রধান। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত হাকিমদের প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ করবেন জেলা প্রশাসক। আর আদালত পরিচালনার জন্য সশস্ত্র পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার।
আগামী ১৬ জানুয়ারি এনসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। এনসিসি নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে মেয়র পদে ছয় জন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছেন।
মেয়র পদে ছয় প্রার্থী হলেন—খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন, স্বতন্ত্র থেকে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাও. মো. মাছুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস এবং বাংলদেশ আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরুর পর এবার হচ্ছে তৃতীয় নির্বাচন। প্রথমবার ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমে, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হয়। ২০১৬ সালে সব কেন্দ্রে ভোট হয় ব্যালট পেপারে এবং এবার ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে।
প্রথমবার নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয় এ সিটিতে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন চালুর পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।