শিপ্রা দেবনাথকে নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সমালোচকরা তাকে নিয়ে নানা প্রশ্নও তুলছেন। ঘটনার সময় শিপ্রা সিনহার গাড়িতে কেন ছিলেন না এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে শিপ্রা বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। সোমবার (১৭ আগস্ট) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ভিডিও বার্তায় সে রাতে কী ঘটেছিল এবং তিনি কোথায় কীভাবে ছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। এ সময় তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করারও হুমকি দেন।
ভিডিও বার্তায় শিপ্রা বলেন, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সেই রাতে এসে আমাদের দুটি মনিটর, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ক্যামেরা, হার্ডডিস্ক, লেন্স এবং আমাদের ফোন ডিভাইস সব নিয়ে যায়। জব্দ তালিকায় তার কোনোটির উল্লেখ নাই। আমি জানি না কিভাবে বা কার কাছে এসব ফেরত চাইবো। আমাদের পার্সোনাল প্রোফাইল থেকে ও সেসব ডিভাইস থেকে চুরি করে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের দায়িত্বশীল অফিসাররাই ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন সেসব। আমার নামে খোলা হয়েছে ফেক ফেসবুক আইডি, ইনস্টাগ্রাম। আমার ব্যক্তি জীবনকে যারা অহনীয় করে তুলেছেন ভিন্ন ছবি ও বিভিন্ন ভিডিও তৈরি মাধ্যমে। তাদের প্রত্যেকের জন্যে আমি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যথাযথ ব্যবস্তা গ্রহণ করবো। কথা দিলাম।
তিনি বলেন, সেই রাতে আমার যেমন আত্মহনন হয়েছিলো ঠিক তেমনি আজও হচ্ছে। নির্দ্ধিধায় মেজর সিনহাকে মেরে ফেলার পর এখন আমাকে এবং আমার সহকর্মীদেরকে করা হচ্ছে সামাজিকভাবে হেনস্থা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ স্বাধীনতার পর থেকে সর্বদা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। অথচ গত কিছুদিন ধরে দেখেছি তারা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে, ফটোশপে এডিট করে, ট্রেইলার করে অথবা আমার বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে নিয়ে বিভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন অর্থে প্রকাশ করা হচ্ছে।
শিপ্রা বলেন, আমি মনে করি, আমার চরিত্রহননের মাধ্যমে এদেশের বাইরে কাজ করা প্রতিটি নারী প্রতি নিগৃহীত ও অপমান জনক আচারণ এটি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন নারী। তিনি নিশ্চয় আমাদের নারীদের এমন অবস্থানগত নিরাপত্তার দিকে আবার নতুন দৃষ্টি কোণ থেকে ভাববেন। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে, এভাবে আমার ব্যক্তিগত জীবনকে নিগৃহীত করার অপচেষ্টা এই বাংলাদেশের আইনে কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়?
তিনি বলেন, আমি সমস্ত পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করছি না। এখানে অনেক সৎ অফিসার রয়েছেন। কিন্তু এরূপ হত্যাকরী কর্মকর্তা এবং একজন নারীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকৃতভাবে উপস্থাপনকারী অসুস্থ পুলিশ সদস্যদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না আনা হলে, এই কলঙ্কের দায়ভার জাতি সম্পূর্ণ বাহিনীর উপর ন্যস্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বলবো যে একজন মানুষ হত্যাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যে আমার টুঁটি চেপে ধরে আমাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিলে লাখো তরুণ-তরুণী এর প্রতিশোধ নিতে নিশ্চয় বিরত থাকবে না।
গত ৯ আগস্ট রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শিপ্রার জামিন মঞ্জুর করেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছিলেন তিনি। পরে ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার চেয়ে ভিডিও বার্তা দেন। এরপর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সামাজিকমাধ্যমে তাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
আর আগে গত ৩ জুলাই স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিন শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাহসিন ইফাত নূর কক্সবাজারে যান। ‘জাস্ট গো’ শিরোনামে মেজর (অব.) সিনহা যে তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করছিলেন, সেখানে কাজ করছিলেন এই তিন শিক্ষার্থী।শিপ
এ জাতীয় আরো খবর..