সিলেটের কানাইঘাটের ডনা সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া দুই বাংলাদেশি যুবকের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার দুপুর পৌনে ২টায় মরদেহ দুটির ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে বিএসএফ-বিজিবির অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ওইদিন সন্ধ্যায় কানাইঘাট থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি। এরপর পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতরা হলেন- কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এরালীগুল গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আসকর আলী (২৬) ও একই গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে আরিফ হোসেন (২২)।
শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম জানান, নিহত আসকর ও আরিফ দু’জনেরই মাথায় সামনের দিকে গুলি করার আলামত পাওয়া গেছে। গুলি কপাল দিয়ে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। গুলির আঘাতের ধরন দেখে মনে হয়েছে এটি বাহিনীর অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে। একজনের মাথায় একটি এবং অপরজনের মাথায় দুটি গুলি লেগেছে বলে জানান এ চিকিৎসক।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডনা সীমান্তের ১৩৩১ নম্বর পিলারের ভারত অংশে গত বুধবার দুপুরে দুই বাংলাদেশি যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানান। এরপর থেকে তিনদিন ধরে নো ম্যানস ল্যান্ডে মরদেহ দুটি পড়েছিলো। তিনদিন ধরে রোদে পুড়ে ও কুয়াশায় ভিজে মরদেহ দুটি পচে ও ফুলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
এর আগে সীমান্তে দুজনের মরদেহ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে হত্যার দায় অস্বীকার করে বিএসএফ। এমনকি মরদেহগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে বলেও জানায় তারা। যদিও বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মরদেহগুলো ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে।
ওই বৈঠকে মরদেহগুলো যে স্থানে পড়ে আছে সেই স্থান কোন দেশে পড়ে আছে তা চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত হয়। শুক্রবার বিকেলে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পর্যায়ে আরেক দফা পতাকা বৈঠকের পর দুটি মরদেহ নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকা থেকে উদ্ধার করে বিজিবি। পরে মরদেহ দুটি জিও বেগে করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহত আরিফের পরিবারের এক সদস্য বলেন, স্থানীয় লালবাজারে যাওয়ার কথা বলে বিকেলে আরিফ ও আসকর বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ডনা সীমান্ত এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে তারা শুনেছেন আসকর ও আরিফ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উখিয়াং এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এ সময় তাদের ওপর গুলি করে বিএসএফ। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা গেলে তাদের মরদেহ সীমান্তের ১৩৩১ মেইন পিলারের পাশে ফেলে রাখা হয়।