জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বেনাপোলেও চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলার বাস চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিরুপায় হয়ে অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।অঘোষিত গণপরিবহন ধর্মঘটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকে যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে ভিড় করছেন পরিবহন কাউন্টারসহ হোটেলে। আবার অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যাচ্ছেন। সব থেকে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন দূর-দূরান্তের যাত্রীরা। অনেকে টাকা পয়সা না থাকায় পারছেন না আবাসিক হোটেলে সিট নিতে।
এদিকে একটানা ধর্মঘট চললে বড় অসুবিধা হবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। বেনাপোল বন্দরের খালাসকৃত পণ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারলে দেশের কলকারখানা পড়বে বিপাকে। কারণ ভারত থেকে দেশের শিল্প কলকারখানার সিংহভাগ পণ্য আসে এ পথে।
শুক্রবার বন্ধ থাকার কারণে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। আজ শনিবার যদি এরকম ধর্মঘট থেকে যায় তাহলে আমদানিকৃত কাঁচা পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রামহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে না পারলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। সাধারণ যাত্রীদের দাবি, দ্রুত যাতে এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
বেনাপোল বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী সোহেল রানা জানান, তিনি যশোর যাবেন ডাক্তার দেখাতে। সকালে বাস স্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন পরিবহন ধর্মঘট। কোনো বাস চলছে না। বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫০ টাকা। বাস বন্ধ থাকায় ইজিবাইকে ভাড়া দাবি করছে দেড়শ টাকা। কোনো উপায় না থাকায় ওই টাকা দিয়েই তাকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
বেনাপোল থেকে কোনো পরিবহন ও বেনাপোল-যশোর সড়কে কোনো বাস চলছে না। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। যে জায়গার ভাড়া সাধারণ সময়ে ১৫ টাকা ছিল সেই জায়গায় এদিনে তারা ২৫ থেকে শুরু করে ৩০ টাকা চাচ্ছেন।
ইজিবাইক চালক বাবুল হোসেনকে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে তাদের আয় একটু বেশি হচ্ছে। তবে খরচও বাড়ছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেশি ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ভারত থেকে আসা ঢাকার পাসপোর্ট যাত্রী আহসান হাবিব ইমন বলেন, আমি চিকিৎসা শেষে বেনাপোল এসে পড়েছি চরম দুর্ভোগে। আমি এবং আমার সাথে থাকা আমার এক ভাই দুইজন মিলে চেন্নাই থেকে ফিরে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় বাড়ি যেতে পারছি না। এদিকে দেশের বাইরে প্রায় ১৫ দিন থাকায় টাকা পয়সাও ফুরিয়ে গেছে। এভাবে ধর্মঘট চললে আমাদের চরম সমস্যা হবে।
বরিশালের যাত্রী পারভিনা আক্তার সীমা বলেন, আমি একটি পরিবহন কাউন্টারে বসে আছি। যদি গাড়ি না ছাড়ে তবে কিভাবে আমি বাড়ি যাব ভেবে পাচ্ছি না। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিপদে পড়েছি।
বেনাপোল কুয়াকাটা এক্সপ্রেস কাউন্টারের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, আমাদের দাবি তেলের মূল্য যখন বেড়েছে তখন ভাড়াও বাড়বে। নতুবা তেলের মূল্য কমাতে হবে। সরকার এই সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত দেশের সকল জেলায় চলবে পরিবহন ধর্মঘট।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, করোনা মহামারি সাধারণ মানুষের আয় ও জীবনযাপনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনার প্রকোপ কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। অধিকাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময়ে তেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধি এক প্রকার জুলুম।