নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে রোববার রাতে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় ইলিশের মোকাম বরিশাল নগরীর পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ বেচাকেনার ধুম পড়েছে। সন্ধ্যার পর কীর্তনখোলা নদী থেকে খাল দিয়ে একের পর এক ইলিশবোঝাই নৌকা, ট্রলার, স্পিড বোট এসে ভিড়ছে ঘাটে।
সড়ক পথেও বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়িবোঝাই করে এসেছে ইলিশ। ঘাটে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে সেসব গাড়ি ও নৌযানকে ঘিরে ধরছেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা। এরপর পাইকারদের সঙ্গে মোকামের আড়তদারদের চলছে দর কষাকষি।
সন্ধ্যার পর ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কমতে শুরু করে। দাম কমার কারণে সাধারন ক্রেতারাও যে যার সাধ্যমত ইলিশ কিনেছেন।
নগরীর পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার ও সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে মোকামে এক কেজি ওজনের ইলিশের পাইকারি মণ গেছে ৪৯ হাজার টাকা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাত ৯টার দিকে সেই ইলিশের মণ ছয় হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার টাকায়।
পোর্টরোড ইলিশ মোকামের মেসার্স আব্দুল্লাহ মৎস্য আড়তের স্বত্ত্বাধিকারী ও জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জহির সিকদার জানান, রোববার মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ। আগামী ২২ দিন দেশের নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এসময় মাছ ধরা, বিক্রি, বিপণন, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ থাকবে।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার আগের দিন রোববার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় ইলিশের মোকাম বরিশাল নগরীর পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে সকালের দিকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ইলিশের দাম ছিল চড়া।
আড়তদার জহির বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পোর্টরোড মোকামে মাত্র ৪০০-৫০০ মণ ইলিশ আমদানি হয়েছিল। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেড় হাজার মনের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে। এ মৌসুমে একদিনে এত ইলিশ আমদানি হয়নি। সেদিক থেকে বলা যায়, আজ রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ পোর্টরোড মোকামে আমদানি হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের দামও সন্ধ্যার পর কমতে শুরু করে।’
জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ও আড়তদার ইয়ার হোসেন জানান, গত দু’একদিনে জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশ বিক্রির জন্য সন্ধ্যার পর পোর্ট রোড মোকামে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া কিছু পাইকার বাড়তি লাভের আশায় ইলিশ বরফ দিয়ে রেখেছিলেন। সেসব ইলিশও বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। এসব কারণে পোর্টরোড মোকামে বিপুল পরিমাণ ইলিশ আমদানি হয়েছে।
দামের বিষয়ে আড়তদার ইয়ার হোসেন জানান, সকালে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে এক হাজার ২২৫ টাকা। সেই ইলিশের মণ রাতে বিক্রি হয়েছে ৪৩ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে কেজি পড়েছে এক হাজার ৭৫ টাকা।
তিনি জানান, রপ্তানিযোগ্য এলসি আকারের (৭০০-৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ সকালে বিক্রি হয়েছে ৪১ হাজার টাকায়। রাতে সেই ইলিশের মন গেছে ৩৫ হাজার টাকা। সকালে আধা কেজি বা ভেলকা আকারের (৪০০-৫০০ গ্রাম) মণ বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। রাতে সেই ইলিশের মন বিক্রি হয়েছে ২২ হাজার টাকা। সকালে গোটরা আকারের (২৫০-৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা। রাতে সেই ইলিশের মণ গেছে ১৬ হাজার টাকায়। এছাড়া জাটকা প্রতিমণ সকালে পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। রাতে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার টাকায়।
রাতে পোর্ট রোডে মোকামে ইলিশ কিনতে আসা মো. সাইদুল জানান, আগামী ২২ দিন ইলিশ ধরা ও কেনা-বেচা নিষিদ্ধ থাকবে। তাই সকালে পোর্ট রোডে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিস্তু দাম বেশি ছিল বলে ইলিশ না কিনে ফিরে যেতে হয়েছে। রাতে দাম কমার কথা শুনে আবার এসেছি। ইলিশের আকার ভেদে কেজিতে প্রায় ১০০-১৫০ টাকা দাম কমেছে। দাম কমার কারণে প্রায় চার ইলিশ কিনেছি।
মৎস্য অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘জেলার নদ-নদীতে মা ইলিশ রক্ষা করে প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন এবং লিফলেট বিতরণ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।’
তিনি বলেন, ‘জেলায় ৭৫ হাজার ৭০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এরমধ্যে ৫১ হাজার ৭০০ জেলের মাঝে বিতরণের জন্য চাল পাওয়া গেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ওই চাল বিতরণ শুরু করা হবে। কর্মসূচি সফল করতে কর্তৃপক্ষ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মৎস্য বিভাগের অন্য জোন থেকে তিনজন কর্মকর্তাকে বরিশাল জেলায় ডেপুটিশনে আনা হয়েছে। তিনি এখানে ২২ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।