টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে পুলিশ চেকপোস্টে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
বুধবার (৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে বাহারছড়া লামার বাজার নামক এলাকায় ওই চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন। এসময় সেখানে কর্মরত সেনা, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আর্মড পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন সেনা প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক।
সেনাপ্রধান বলেন, ৩১ জুলাই যে ঘটনা এখানে ঘটেছে সেটাকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মাকে ফোন করে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তার কথার ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর আস্থা আছে। যে যৌথ তদন্ত দল গঠিত হয়েছে, তার ওপরও দুটি বাহিনীই আস্থাশীল। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই— এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর সম্পর্কে চিড় ধরবে না। সেনাবাহিনী ও পুলিশ এমন কোনও কিছু করবে না যাতে করে যে নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সেনা ও পুলিশের যে সম্পর্ক সেটি কোনোভাবে নষ্ট হতে দেওয়া হবে না। যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘অনেকের দেশবিরোধী এজেন্ডা আছে, সরকারবিরোধী এজেন্ডা আছে আবার অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পছন্দ করে। ভেজাল লাগিয়ে দিতে পারলে সুবিধা হয়। আমরা এইটা করতে দেবো না। ৩১ জুলাই টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘টেকনাফে যে ঘটনাটি ঘটেছে তার কারণে দুই বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের কোনও ব্যত্যয় ঘটবে না।’
পুলিশ প্রধান বলেন, এই ঘটনাটিকে নিয়ে অনেকেই উস্কানিমূলক কথা বলছে। এসব বলে তারা সফল হতে পারবেন না। কারণ, দুই বাহিনীর ৫০ বছরের যে সম্পর্ক সেটি সামনে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ খান। ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাশেদ তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার এক সঙ্গীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের কিছুটা অমিল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ পুলিশের ৯ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তা রাশেদের বোন শারমিন শাহরিয়া কক্সবাজারের আদালতে এই মামলা করেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে হেলিকপ্টারে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। তারা টেকনাফে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সুত্র বাংলা ট্রিবিউন