চুক্তির মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাটি ভরাট, বিতর্কিত জায়গা-জমি দখল-বেদখল এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
এসব কাজ করতে গিয়ে গুলির ঘটনা ঘটিয়েই চক্রটি দুর্গম একালায় চলে যেত। তারা বিভিন্ন সময় চুক্তির মাধ্যমে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করত।
ক্যান্টনমেন্ট থানার আরব আলী হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের গুলশান বিভাগের একটি টিম তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সাহজামান ওরফে বাবু, মো. দুলাল প্যাদা ওরফে জিএমপি দুলাল ও মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজন।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি রিভলবার, একটি পিস্তল ও তিন হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ঢাকা শহরে অবৈধ জমি দখল ও চাদাবাজির বিষয়ে তীক্ষ্ নজর রেখেছে ডিবি। এসব ঘটনা ঘটলে ডিবি তাদেরকে ছাড় দেবে না। কোথাও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে থানায় জানাবেন। ঢাকায় এ ধরনের ঘটনার পর ঢাকার বাইরে পালিয়ে গেলে কেউ রক্ষ পাবে না।
ডিবি প্রধান বলেন, ক্যান্টমেন্ট থানার মামলার বাদী মো. আরব আলী পেশায় একজন ঠিকাদার। গত ১৫ মার্চ বাদীর এলাকার লোকজন নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে এলাকার ৮০ ফুট প্রশস্ত সুয়ারেজ ড্রেনের কাজের দায়িত্ব তাকে দেয়। কাজ চলাকালীন গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময় তার কাছে চাঁদা দাবি করে হুমকি দিতে থাকে। ঠিকাদার আরব আলী চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ৩০ মার্চ দুপুরে ক্যান্টনমেন্ট থানার ৩৩/এ বাসার সামনে রাস্তার ওপর তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। আরব আলী ডান পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এরপর ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও পর্যালোচনা ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. সাহাজাহান ওরফে সাবুকে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তার দেয়া তথ্যমতে পল্লবী থানার কালশী বাউনিয়াবাঁধস্থ তার বাসা থেকে ৬ চেম্বার বিশিষ্ট একটি রিভলবার ও এক হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযানকালে কালশী এলাকা থেকে মো. দুলাল প্যাদা ও জিএমপি দুলাল ও মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও দুই হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্র্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কন্ট্রাক্টের (চুক্তি) মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করত। এ ছাড়াও তারা পরস্পর যোগসাজশে মাদক ব্যবসার বিস্তৃতি ও ভাষানটেক, কালশী, ক্যান্টনমেন্ট, মাটিকাটা এলাকায় চাঁদাবাজী ও প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করত। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্র্রেফতারকৃতদের পৃষ্ঠপোষক কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ইব্রাহীম ও যুবরাজের তত্ত্বাবধানে তারা কাজ করত বলে জানিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও এ চক্রের আরও আট থেকে ১০ জনের নামের তালিকা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।