হঠাৎ করে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নতুন একটি কমিটির ঘোষণা আসায় এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই কৌতহলের সৃষ্টি হয়েছে। গঠনতান্ত্রিক কোনো ধারা অনুসরণ না করে এক আলোচনা সভায় ওই কমিটি ঘোষণা করাকে এই দলেরই প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের স্টান্টবাজি বলে মনে করছেন তারা। তা ছাড়া বিদিশা পুত্র শাহতা জারাব এরিককে পুঁজি করে এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়িতে প্রবেশের মতোই জাতীয় পার্টিকেও আয়ত্ব করতে চাচ্ছেন কি-না-এমন প্রশ্নও উঠেছে।
গত ১৪ জুলাই রাজধানীর প্রেসিডেন্ট পার্কে আয়োজিত এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় হঠাৎ কমিটি ঘোষণা দেন এরিক এরশাদ। কমিটিতে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করার পাশাপাশি বিদিশা ও এরশাদ-রওশনের পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদকে (সাদ এরশাদ) কো-চেয়ারম্যান করা হয়। এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। সভার ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে রওশন এরশাদের নাম লেখা ছিল। তবে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। আয়োজকদের দাবি, অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।
কমিটি ঘোষণার একদিন পরেই রওশন এরশাদ জানিয়েছিলেন, তিনি চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, এরশাদ-বিদিশার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে এরিক এরশাদের ঘোষণায় কোনো রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা যায় না।
এ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘যারা কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন তারা দলের কেউ নন। তারা রাস্তার লোক। এরা টোকাই।
এরিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে প্রতিবন্ধী ছেলে। তার কী ক্ষমতা আছে দল ঘোষণা দেয়ার।’ কাজী মামুনুর রশীদ সম্পর্কে বলেন, ‘সে কে আমি চিনি না।’
জাপার কয়েকজন নেতা জানান, কমিটি ঘোষণার দুই সপ্তাহ অতিক্রম হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো শীর্ষ নেতা বা দলটির সাধারণ নেতাকর্মীকে যুক্ত হতে দেখা যায়নি। একটি সুত্র জানায়, এরশাদ ট্রাস্টের বিশাল সম্পদ নিয়ন্ত্রণে নেয়া এই কমিটি ঘোষণার পেছনে কাজ করছে।
কমিটি ঘোষণা করেই বসে নেই বিদিশা সিদ্দিক। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সময় হলে দেখতে পাবেন, কমিটি ঘোষণার কয়েকদিন পর রাজধানীর গুলশানের ৪ নম্বর সড়কের ১৭ নম্বর হাউসের জাতীয় পার্টির অফিস নেয়া হয়েছে।
কমিটি পেছনে আর কারা আছেন জানতে চাইলে বিদিশা বলেন, রাজনীতি তো একা একা হয় না। আর আমি তো এমনি এমনি নামিনি।
তিনি জানান, কমিটি ঘোষণার পর তার সঙ্গে জাপার ভেতরে বাইরে, এমনকি অন্য দল থেকেও অনেকে যোগাযোগ করছেন। সময় হলেই তারা প্রকাশ্যে আসবেন।
জাপা সূত্র জানায়, বিদিশার এই তৎপরতার পেছনে দলের সিনিয়র নেতাদের কারো কারো ইন্ধন থাকতে পারে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রওশন এরশাদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও ছেলে সাদ এরশাদের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন দলের কোনো কোনো নেতা। এ ছাড়া দলের বাইরে থেকেও একটি মহলের ইন্ধন থাকার গুঞ্জন রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে সাদ এরশাদকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রেসিডেন্ট পার্কের ওই আলোচনাসভায় উপস্থিত থেকে সাদ এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমরা জঞ্জালমুক্ত থাকতে চাই। বেশি পলিটিক্যাল কথা বলতে আসিনি। আজ আমার আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী। সবাই আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্য দোয়া করবেন। আমার আম্মা বিরোধীদলীয় নেতা, ওনার বয়স হয়েছে। ওনার জন্য দোয়া করবেন। তিনি অসুস্থ সেজন্য আসতে পারেননি।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর জাপার নেতৃত্ব নিয়ে ছোট ভাই জি এম কাদের ও ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়েও দ্বন্দ্ব হয় দুজনের মধ্যে। শেষে দুইপক্ষের সমঝোতায় জি এম কাদের জাপার চেয়ারম্যান হন। আর রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন।