র‌্যাব-১১ কর্তৃক কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে বহুল আলোচিত ক্যাসিনোর আদলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী একজন গ্রেফতার ক‌রা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে খেলালাকে কেন্দ্র করে অনলাইন জুয়ায় যুবক ও তরুণদের মাঝে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই জুয়ার পরিমাণ লীগ পর্যায়ে খেলাগুলোতে কম হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরকে সামনে রেখে তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী চলমান কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপকে সামনে রেখে  বাংলাদেশে এই অনলাইন জুয়ার পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই র‌্যাব কর্তৃক এই অনলাইন জুয়া চক্রকে গ্রেফতার করার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা। এরই সুত্র ধরে র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-২ এর একটি আভিযানিক দল ১১ জুলাই ২০২১ ইং তারিখ গভীর রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার বাবুটিপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

উক্ত অভিযানে এই চক্রের অন্যতম সদস্য বাবুটিপাড়া গ্রামের আশকর সর্দারের ছেলে শরীফ শাহজালাল @ মিরাজ (২৫) এরবাড়িতে তল্লাশী করে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় ব্যবহৃত ০২টি মোবাইল, নগদ ৪৩,৮০০/- (তেতাল্লিশ হাজার আটশত) টাকা ও ৩টি চেকবই উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। শরীফ শাহজালাল @ মিরাজ (২৫) কে বাসায় না পেলেও তার স্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে এই অনলাইন জুয়া চক্রের অন্যতম সদস্য একই গ্রামের মোঃ শহিদুল্লাহ এর ছেলে মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) এর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। উক্ত অভিযানে র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-২ এর আভিযানিক দল মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) কে আটক করতে সক্ষম হয়। এসময়ে তার নিকট হতে ০৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়, যার মাধ্যমে  সে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছিল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই চক্রের অপর একজন সদস্য একই গ্রামের কামাল হোসেন যে বর্তমানে র‌্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে অনলাইন জুয়া পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত আরো ৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ৯৫,০০০/-(পঁচানব্বই হাজার) টাকা, ও ০১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। উক্ত অভিযানে অনলাইনে জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত সর্বমোট ১,৩৮,৮০০/- (এক লক্ষ আটত্রিশ হাজার আটশত) টাকা, ১১টি মোবাইল ফোন, ১৪ টি সীমকার্ড, ০১টি ল্যাপটপ
ও ৩টি চেকবই উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ১১টি মোবাইলের মধ্যে ৮টি মোবাইল অন করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত মোবাইল সমূহের বিকাশ, নগদ, ডাচ বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে ১১/০৭/২০২১ ইং তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ৫৬,৩৭,৯১৮/-(ছাপ্পান্ন লক্ষ সাতত্রিশ হাজার নয়শত আঠারো) টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়।

এই চক্রটি মুলত “বাজী লাইভ” নামে মালয়েশিয়ান ওয়েব সাইট ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে। এই ওয়েব সাইটটি  মালয়েশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এর একজন করে  এজেন্ট নিয়োগ করা আছে। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার মুল
এজেন্ট মুরাদনগর থানার বাবুটিপাড়া গ্রামের সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫)। সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) মুলত শরীফ শাহজালাল @ মিরাজ (২৫), মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) ও কামাল হোসেন এর মাধ্যমে ১৯টি গ্রুফ তৈরী করে এই অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ এ ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ‌্যমে এ জুয়া কার্যক্রম প‌রিচালনা করার কথা স্বীকার ক‌রে।

দেশের বাহিরে বাংলাদেশের টাকা প্রচুর পরিমাণে পাচার হচ্ছে। পাচারকৃত টাকার পরিমাণের উপর এই চক্রের মূল হোতা সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) নির্ধারিত হারে কমিশন পায় এবং শরীফ শাহজালাল @ মিরাজ ,মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) ও কামাল হোসেনকেও কমিশন দেয়। এই চক্রটি দরিদ্র তরুণ/যুবকদেরকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক লাভের লোভ দেখিয়ে অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত করছে। এতে করে বিষয়টি সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হ‌চ্ছে। ধৃত আসা‌মি‌দের বিরু‌দ্ধে আইনানুগ ব‌্যবস্থা গ্রহন করা হয়।