দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বজ্রপাতের ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে রবিবার (৬ জুন) বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বজ্রপাতে মৃত্যু বা হতাহতের ঘটনা এড়াতে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, “বজ্রপাত একটি আকস্মিক ঘটনা, যা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন। যদি (বজ্রপাত) হয়ে যায় তাহলে অনেকের মৃত্যু হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, খেয়াল রাখতে হবে বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে সর্বোচ্চ হলে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তাহলে বর্তমান সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটতে পারে।
মৃত্যু ও হতাহত এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনাসমুহ হলোঃ-
* বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
* বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
* বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
* বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরনের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
* খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক ।
* বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিৎ হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
* যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রায় ১৫০ জন মানুষ মারা যান। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হাওর অঞ্চলে। মানুষ ছাড়াও বজ্রপাতে গবাদি পশুও মারা যায়। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে বাংলাদেশের সরকার বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বজ্রপাত সম্পর্কে কোরআনের বর্ণনা – বজ্রপাত আল্লাহর শক্তির নির্দশন গুলোর একটি !
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহতায়ালার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তার প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা এমনটি করেন না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘বজ্র তারই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তার ভয়ে ফেরেশতারাও (তাসবিহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তার শক্তি অতি প্রচ-। (সুরা রা’দ, আয়াত : ১৩)
শরিয়ত মোতাবেক মানুষের কাজকর্মই বজ্রপাতের মূল কারণ। খোদাদ্রোহিতা, জিনা, ব্যভিচার, পরকীয়া, অন্যায়-অত্যাচার দুনিয়ায় যত বাড়বে, ততই দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ বাড়বে।
কিন্তু আমরা যদি এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে সরে এসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে তাওবা করতে পারি, তাহলে হয়তো এ ধরনের দুর্যোগ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের প্রবল পরাক্রমশালী প্রভু বলেছেন, যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম, সকালবেলায় সূর্য দিতাম এবং কখনো তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শোনাতাম না। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৭০৮)
বজ্রপাতে পালনীয়
বজ্রপাত থেকে বেঁচে থাকার কিছু বাহ্যিক করণীয় রয়েছে। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) তার উম্মতকে বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫০)
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রের আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। ’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৯২১৩)