বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে বিএনপিমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার, নির্বাচন কমিশন কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। তাদেরকে যেতে হবে। এরপর একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে। এ কাজটি আমেরিকা, চীন, ভারত করে দিয়ে যাবে না। দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে আমাদের নিজেদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে এবং এর নেতৃত্ব অবশ্যই বিএনপি কে দিতে হবে। আর সামনে থাকবে তরুণরা।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নবীন প্রজন্মকে সংগঠিত করেই সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করার কথা বলে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যেটা চাচ্ছেন মুহূর্তের মধ্যে, যেটা আমরা সবাই চাচ্ছি যে, রাজপথে আন্দোলনে মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থান হবে। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকার পরাজিত হবে। এক্ষেত্রেও অতীতের মতো আজকেও ছাত্রদের, শ্রমিকদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, রাজপথে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরাজিত হবে, অবশ্যই হবে। গণঅভ্যুত্থান তৈরি করতে হবে তো? কারা তৈরি করবে? ইয়াং জেনারেশন। তারাই পারবে। যেকোনো কেনো পরিবর্তনে তাদেরকেই সামনে আসতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে যদি আমরা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা সফল হবো।
আন্দোলনে প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে, আমার বয়স ৭২ পার হয়ে গেছে। তারপরেও তো আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াই। যেদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাজকে (ছাত্র নেতা) আমার বুক থেকে যখন ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেদিন ক‘জন আপনারা ঘুরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলেন তো? আমরা তো সবসময় আশা করি, আমাদেরকে শক্তি যোগাবে তরুণরা। নব্বইয়ে এরশাদকে হটিয়ে দিয়েছিলেন তরুণরা-যুবকরা, পাকিস্তানকেও হটিয়েছে তারাই। আজকেও এই যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে সংগঠিত ও তৈরি করতে হবে। সেই কাজ শুরু করুন, তাহলে দেখবেন আন্দোলন সহজ হয়ে যাবে।
এখন যুবকরা কোথায় প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে ছাত্র এবং শ্রমিকরা যেকেনো আন্দোলনে সামনে থেকে ভূমিকা পালন করতো, ভ্যানগার্ড। এখন তারা কোথায়? এখন তারা অপেক্ষা করে থাকে বিএনপি কখন মিটিং করবে? অনেকে বলেন, বিএনপি ডাক দিচ্ছে না কেনো?বিএনপি তখনই ডাক দেবে যখন বিএনপি মনে করবে যে, ডাক দেয়ার সময় হয়েছে। ডাক দিয়েছে তো অতীতেও। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আমরা প্রায় ৬ মাস অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলিনি? একেবারে গ্রামে-গঞ্জে হাট বাজার পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়নি। ২০১৬ সালে ম্যাডাম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হলেন, তখন গোটা বাংলাদেশ অবরোধ ছিলো না? তারপরেও কিন্তু হয়নি। আজকে বার্মাতে (মিয়ানমার) ১২‘শ ছাত্র-ছাত্রীকে গুলি করে মেরে ফেললো। সরাতে পেরেছে জান্তাকে? পারেনি। মিসরে আন্দোলন করে ইসলামী ব্রাদার হুডের মোহাম্মদ মুরসির সরকার গঠিত হলো- একটা বছরও টিকতে পারেনি। পরিবর্তনগুলো আপনাদের বুঝতে হবে। সঠিকভাবে পরিবর্তনগুলো বুঝে আমাদেরকে জনতার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জনতার শক্তির কাছে কোনো শক্তি দাঁড়াবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে ওদেরকে পরাজিত করতে হবে।
খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের প্রাণশক্তি অভিহিত করে তিনি বলেন, তিনি হচ্ছেন ব্যাবিলনের সেই বংশীবাদক যার বাঁশি না বাজলে মানুষ বের হয়ে আসে না। এটা সত্য। আজকে ম্যাডামকে বন্দি করে রেখেছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা (সরকার) কাজগুলো করেছে। আমাদেরকে তার মুক্তির জন্য সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে, তাকে মুক্ত করতে হবে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, রোববার সংসদে ওদের (সরকার দলীয় একজন সদস্য বলেছেন, বড় চোরদের দুর্নীতিতে মাথা হেট হয়ে যায়। মানে ওরা ছোট চোর। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য চলছে। তাদের দেয়া একটা পরিসংখ্যানও ঠিক নাই। করোনা টেস্ট, মৃত্যু, কত টাকা পাঁচার হচ্ছে কোনটাই ঠিক নেই। এখন বাড়ি হচ্ছে কানাডায়, মালয়েশিয়াতে, সৌদি আরবে, লন্ডনে। শপিং মল তৈরি হচ্ছে। কেউ আর দেশে টাকা রাখে না। কারণ জানে যে, সময় আসবে যখন প্রত্যেকটার হিসাব নেবে মানুষ।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ হাসান, মেহেদী হাসান, জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিরাজুল ইসলাম, কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন, জাহানারা সিদ্দিকী, সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।