সাদা ভাত, আলু-ডিমের তরকারি ও ডাল। একের পর এক প্লেট সাজিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে। একজন দিচ্ছেন লবণ আর আরেকজন পানি। অন্যরা দাঁড়িয়ে তদারকি করছেন কার কী লাগবে। ভরপেট এ খাবারের দাম মাত্র ৫ টাকা। তাও আবার যত খুশি ভাত ও ডাল নেওয়া যাবে।
এমন উদ্যোগ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জের একদল শিক্ষার্থী। রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা, হকার কিংবা ভিক্ষুকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের পেটে আহার জুটছে উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের গড়ে তোলা অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘মুক্ততরী’র ব্যানারে। তারা এই কার্যক্রমের নাম দিয়েছে ‘পঞ্চে তৃপ্তি’।
সরেজমিনে নগরীর চাষাঢ়া এলাকায় শহিদ জিয়া হল প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা মিলে মুক্ততরী সংগঠনের সদস্যদের কার্যক্রম। ৫টাকার নোট বা কয়েন নিয়ে লাইন ধরে খাবারের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিচ্ছেন সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে। কয়েকজন বৃদ্ধা এসে টাকা নেই বললে তাদেরও বিনামূল্যে বেশ সম্মান করেই বসিয়ে খবার দেওয়া হচ্ছে।
যতক্ষণ খাবার ছিল খেতে আসা কোনো মানুষকেই না খেয়ে ফিরে যেতে হয়নি। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অনেকেই এ সময় অনুভূতি জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন, অনেকে দুহাত তুলে দোয়া করেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলেন, সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষ আছে, যারা এসব করে না। অথচ এই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এমন উদ্যোগ নিয়ে অসহায় মানুষকে খাওয়াচ্ছে।
মুক্ততরী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক জয় দত্ত বলেন, করোনাকালে কর্মহীন মানুষকে নিয়ে কিছু করার চিন্তা থেকেই মূলত এই সংগঠনের শুরুটা হয়েছিল সমমনা সহপাঠী ও জুনিয়রদের নিয়ে। ২০১৯ সালে প্রথম সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করি। চলতি বছরের পহেলা জুন আমাদের সংগঠনের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। গত বছর ‘২ টাকার হাসি’ নামে একটি প্রজেক্ট শুরু করেছিলাম।
যেখানে দুই টাকার মাধ্যমে পোশাক, খাবার ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। চলতি বছর সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির আগে সদস্য আলো আক্তার ৫ টাকার আহারের বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রস্তাব করে।
পহেলা জুন থেকে ‘পঞ্চে তৃপ্তি’ কার্যক্রম শুরু করি। সংগঠনের সদস্যদের দেওয়া ‘পকেট মানি’ থেকেই আয়োজনটির যাত্রা শুরু।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিন ভাত, মুরগির মাংস, ডাল ছিল। পরে আর্থিক কারণে মেন্যু পরিবর্তন করে ভাত, ডিম আলু তরকারি, ডাল দেওয়া হচ্ছে। সবার জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি। এর ধারাবাহিকতায় আমরা প্রতিদিন খাবার পরিবর্তন করছি। কোনোদিন মাছ, কোনোদিন মাংস, কোনোদিন সবজি- এভাবে দেওয়া হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ আমাদের সহায়তা করছেন।
জয় দত্ত বলেন, আজও একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী এসে আমাদের এই উদ্যোগে সহায়তা করেছেন। এসব দেখলে আমরা আরও বেশি উদ্যম পাই।
তহবিলের বিষয়ে তিনি বলেন, সদস্যরা সবাই শিক্ষার্থী হওয়ায় স্বল্প পরিসরে এই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। কারণ আমাদের ফান্ড অনেক কম। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আমাদের মধ্যমে এসব মানুষের সহযোগিতা করতে চাইলে তাদেরকে আমরা আহ্বান জানাব। যাতে আমরা এ আয়োজনটা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
মুক্ততরীর অপর সমন্বয়ক রুবাইদ হাসান সায়মন বলেন, আমাদের যে ফান্ড আছে তা দিয়ে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব। যদি কারও কাছ থেকে আমরা আর্থিক সহযোগিতা পাই, তাহলে সেটা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যাব।