সম্প্রতি ঢাকার গুলশানের এক অভিজাত ফ্লাটে কুমিল্লার মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এই মৃত্যুর পিছনে দায়ী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নাম জড়িয়ে পড়ায় এটি বেশ টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। মুনিয়ার বোন বাদি হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির বিচার দাবি করে সোচ্চার হতে দেখা যায় আমজনতাকে। মুনিয়ার বোনকেও বেশ সোচ্চার হতে দেখা যায় বিচারের দাবিতে। মুনিয়ার ঘাতকের বিচারের দাবিতে কুমিল্লা সদরে একাধিক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সদর সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও একটি মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে মুনিয়ার ঘাতকের বিচার দাবি করেন। এর মধ্যেই আরেকটি অঘটন ঘটে। এদিকে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ মুনিয়ার মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে এই ঘটনায় হুইপপুত্র শারুনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনার বিচার নিয়ে দুই ভাইবোনের দুই পথ বেছে নেওয়ার পর মুনিয়ার মামলাটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। ভাই-বোন একে অপরকে দোষারুপ করছে। বিপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে মামলা করারও অভিযোগ করছেন একে অপরের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে পরিবারই এখন টালমাটাল।
মুনিয়া কি আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে জট এখনো খোলেনি। এটি হত্যাকাণ্ড না আত্মহত্যা সেটা বোঝার আগেই মুনিয়ার বোন আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দিলেন। এরপর মুনিয়ার ভাই হত্যা মামলা দিলেন। এরপর হুমকি পাচ্ছেন বলে থানায় জিডি করলেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। এর কিছুদিন পরই ভাই চলে গেলেন আত্মগোপনে। কেউই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে পাচ্ছেন না। এদিকে হঠাৎ করে মুনিয়ার বোন নুসরাতও চুপ হয়ে গেছেন কেন।
নুসরাত বিভিন্নজনকে বলেছেন, শুরুতে তাকে যারা উস্কে দিয়েছেন মামলা করার জন্য তাদের কেউ এখন তার পাশে নেই। শুরুর দিকে যে সমস্ত গণমাধ্যমগুলো বিশেষ শিল্প গ্রুপকে ঘায়েল করার জন্য উৎসাহিত হয়েছিল তারাও এখন অন্য ইস্যুর খোঁজে ব্যস্ত। তারা আর নুসরাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর অতি উৎসাহী নুসরাত হয়তো এখন নিজেই চুপ করে আছেন।
এদিকে একটি চার্টাড ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের পরিবার। তবে আনভীর আত্মগোপনে রয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সায়েম সোবহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। প্রতিমাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে সায়েম সোবহান মুনিয়াকে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। আনভীর নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতো। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো। মুনিয়ার বোন অভিযোগ করেছেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। একটি ছবি ফেসবুকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান তার বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এছাড়া মুনিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মুঠোফোনে মুনিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন আনভীর।সুত্র/আকু