পি নিউজঃ সেবা প্রত্যাশীদের মনে বর্তমানে একটি অসত্য ধারণা বসত বেঁধেছে! তারা মনে করে সর্বক্ষেত্রে দালালের দৌরাত্ম্যই বেশি। দালালের শরণাপন্ন না হয়েও যে সেবা পাওয়া যায়, তা তাদের ধারণাতে নেই। বর্তমানে সরকারী সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান নাগরিক সেবা দ্রুত ও নিশ্চিত করতে সবসময় তৎপর রয়েছে। সরকারী অন্যান্য সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অন্যতম সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে সেবা প্রত্যাশী হিসেবে আপনি সহজে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাঙ্খিত সেবা পেতে পারেন।
আসুন জেনে নেয়া যাক বিআরটিএ আপনাকে কি কি সেবা দিয়ে থাকে। বিআরটিএ এর সেবার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেবা হচ্ছে-মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া, মোটরযানের মালিকানা বদলী, মোটরযানের ফিটনেস, মোটরযানের ট্যাক্স টোকেন, মোটরযানের রুট পারমিট, নম্বর প্লেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি)।
আলোচ্য সেবাগুলো সহজে পেতে আপনাকে কি করতে হবে। সেসব বিষয়ে পাঠককে তথ্য জানাচ্ছে ডিএমপি নিউজ। আসুন জেনে নেয়া যাক সেবাগুলো কিভাবে নিবেন।
মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াঃ
মোটরযান রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এটা আপনার মোটরযানের বৈধতার প্রমাণ। কোন প্রকার দালালের দ্বারস্ত না হয়ে নির্ধারিত সহজ নিয়মে করুন আপনার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করবেন এভাবে, সেবাপ্রত্যাশী সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তাঁর মোটরযানের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করবেন।
অত:পর বিআরটিএ অফিস কর্তৃক তাঁর আবেদন ও সংযুক্ত দালিলাদি যাচাই-বাছাই করে সঠিক পাওয়া গেলে গ্রাহককে প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন ফি জমা প্রদান করতে একটি এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ প্রদান করা হবে।
ফি জমা প্রদানের পর গাড়িটি পরিদর্শণের জন্য বিআরটিএ অফিসে হাজির করতে হবে। গাড়িটি পরিদর্শণ করার পর মালিকানা ও গাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিআরটিএ ইনফরমেশন সিস্টেমে এন্ট্রির পর সহকারী পরিচালক(ইঞ্জি:) কর্তৃক রেজিস্টেশনের অনুমোদন প্রদান করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখপূর্বক একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ট্যাক্স টোকেন প্রিন্ট করে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর করত: গ্রাহককে প্রদান করা হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া:
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। গ্রাহককে তার স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান ঠিকানা (প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ) বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত তাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এসময় প্রার্থীকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২০ বছর এবং অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।
মোটরযানের মালিকানা বদলীঃ
মোটরযানের ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের সমন্বিত করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে মোটরযানের মালিকানা বদলীতে। আপনি যেভাবেই মোটরযান কিনুন না কেন আপনাকে বিআরটিএ থেকে মালিকানা পরির্বতন করতে হবে।
মোটরযানের মালিকানা বদলীর পদ্ধতি হচ্ছে, নির্ধারিত ফরম ‘টিও’ তে ক্রেতার স্বাক্ষর এবং ‘টিটিও’ এর নির্ধারিত স্থানে ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর প্রদান। ফরম ‘টিটিও’ এবং বিক্রয় রশিদে বিক্রেতার স্বাক্ষর প্রদান (স্বাক্ষীর স্বাক্ষর ও রাজস্ব স্ট্যাম্পসহ)।
নির্ধারিত বিআরটিএ’র ফি জমা দিয়ে রশিদের মূলকপি দাখিল। ছবিসহ বিক্রয় সংক্রান্ত ২০০/- টাকা অথবা সরকার নির্ধারিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল।
মোটরযানের ফিটনেস:
সর্বশেষ বিআরটিএ’র যে সার্কেল অফিস হতে সেবাগ্রহণকারী তার মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ বা ফিটনেস নবায়ন করেছেন উক্ত সার্কেল অফিসে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার মোটরযানের ফিটনেস নবায়নের জন্য আবেদন করবেন এবং পরিদর্শনের জন্য মোটরযানটি ঐ অফিসে হাজির করবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে যা লাগবে, নির্ধারিত ফরমে পূরণকৃত ও স্বাক্ষরকৃত আবেদনপত্র, প্রয়োজনীয় ফি প্রদানের রশিদ, ফিটনেস সার্টিফিকেটের মূল কপি, হালনাগাদ ট্যাক্স টোকেন এর সত্যায়িত ফটোকপি, TIN সংক্রান্ত কাগজপত্র-এর সত্যায়িত কপি ও অনুমিত আয়কর প্রদানের প্রমাণপত্র।
মোটরযানের ট্যাক্স টোকেন:
মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সয়ম ১ম ট্যাক্স টোকেন বিআরটিএ কর্তৃক ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে নির্ধারিত ফি প্রদান স্বাপেক্ষে নির্দিষ্ট ব্যাংক হতে ট্যাক্স টোকেন নবায়ন করা যায়।
ট্যাক্স টোকেন নবায়ন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে যা লাগে- পূর্বের ইস্যুকৃত ট্যাক্স টোকেন সার্টিফিকেট (মূল কপি) ও ট্যাক্স টোকেন সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে জিটি ও ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কপি।
রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়ন প্রক্রিয়াঃ
আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী এক বা একাধিক বিভাগের আওতাধীন রুটে স্টেজ ক্যারেজ (বাস, মিটিবাস) ও কন্ট্রাক্ট ক্যারেজ-এর আবেদনপত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ সদর কার্যালয়, এলেনবাড়ি, তেজগাঁও, ঢাকা-এ দাখিল করতে হয়।
আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী একই বিভাগের আওতাধীন রুটে স্টেজ ক্যারেজ (বাস, মিটিবাস) ও কন্ট্রাক্ট ক্যারেজ-এর আবেদন সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক ইস্যু/নবায়ন -এর জন্য বিআরটিএ’র বিভাগীয় অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দাখিল করতে হয়।
অনধিক দুই জেলার মধ্যে চলাচলকারী স্টেজ ক্যারেজ, কন্ট্রাক্ট ক্যারেজ এবং যে কোন রুটে চলাচলকারী সাধারণ পরিবহন/প্রাইভেট পরিবহণ (মালবাহী ট্রাক, ভ্যান, ট্যাংকলড়ী ইত্যাতি) মোটরযানের রুট পারমিটের আবেদন সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) কর্তৃক নিস্পত্তি করা হয় যার আবেদনপত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে দাখল করতে হয়।
রুট পারমিটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে যা লাগে- নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্র পূরণ ও স্বাক্ষর, প্রয়োজনীয় ফি প্রদানের রশিদ, চালকের নিয়োগপত্র ও ড্রাইভিংলাইসেন্স-এর সত্যায়িত কপি, রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি, রুটপারমিট সার্টিফিকেটের মূল কপি (নবায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য), হালনাগাদ ট্যাক্স টোকেন এর সত্যায়িত ফটোকপি, TIN সংক্রান্ত কাগজপত্র-এর সত্যায়িত কপি ও অনুমিত আয়কর জমার রশিদ এর সত্যায়িত ফটোকপি।
নম্বর প্লেট:
অত্যাধুনিক নম্বর প্লেট প্রদান করতে বিআরটিএ। মোটরযানে ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজনের জন্য গ্রাহককে মোটরযানের ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস হালনাগাদ স্বাপেক্ষে নির্ধারিত ফি জমাদানকরত সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে।
ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি):
পেপারবুক রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর পরিবর্তে নতুন রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের ইলেক্ট্রনিক চিপযুক্ত উচ্চ নিরাপত্তা ফিচারসমৃদ্ধ ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) প্রদান করা হচ্ছে। ডিআরসি এর ফি জমা প্রদানের পর গ্রাহককে বায়োমেট্রিক্স (চার আঙুলের ছাপ, ডিজিটাল ছবি ও স্বাক্ষর) প্রদানের জন্য এসএমএস এর মাধ্যমে অবহিত করা হয়। বায়োমেট্রিক্স প্রদানের জন্য গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে এ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করতে হয়। ডিআরসি তৈরী হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে অবহিত করা হয় এবং একইভাবে এ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করে গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে ডিআরসি গ্রহণ করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন- রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়ির মালিকানা বদলীর ক্ষেত্রে করণীয় ও
নিলামে কেনা বাইক রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে করণীয়।
তথ্যসূত্রঃ বিআরটিএ।