পরিবারের কোনো সদস্য মৃত্যু বরণের পর যে অনুষ্ঠান প্রতি পরিবারেই কম-বেশি পালন করা হয়, ওইসব অনুষ্ঠানের মতো মৃত্যুর আগেই ১০ গ্রামবাসীকে বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে খাইয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মোসলেম প্রধান নামে ৮৮ বছর বয়সের এক বৃদ্ধ।
এ ছাড়াও তিনি ১০টি মসজিদের ইমাম সাহেবকে দিয়ে তিনি বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়া মোনাজাত করিয়েছে। মোনাজাত শেষে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অথিতিদের নিযে মেহমানদারিও করেছেন। মৃত্যুর আগে নিজের চেহলামের খরচ নিজেই করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে।
ব্যতিক্রম আয়োজন করে আলোচনায় আসা এই বৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামতাল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তিনি।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী আগত অথিতিদের উপস্থিতিতে লোকে লোকারান্য হয়ে ওঠে বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের কামতাল এলাকা। মৃত্যুর আগেই ১০ গ্রামবাসীসহ কয়েক হাজার মানুষের ভুড়িভোজে বন্দর উপজেলা জুড়ে চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি করেন বৃদ্ধ মোসলেম প্রধান।
হাজী মো. মোসলেম প্রধানের বয়স প্রায় ৮৮ বছর হলেও এখনো সুস্বাস্থ্যের অধিকারি তিনি। সুস্থ সবল এবং পায়ে হেঁটে দোকানে বসে সঙ্গীদের সঙ্গে চা-পানের আড্ডা দেন নিয়মিত। এছাড়াও ভাড়াটিয়াদের ভাড়া তোলাসহ বাড়ি তদারকি নিজেই করেন। ৯ সন্তানের জনক এই বৃদ্ধ। সন্তান্দের মধ্যে চারজন ছেলে ও পাঁচজন মেয়ে। তার স্ত্রী এখনো সুস্থ্যভাবে বেঁচে আছেন।
চার ছেলের সংসারে নাতি-নাতিনসহ বড় একটি যৌথ পরিবার মোসলেম প্রধানের। স্ত্রী, চার পুত্র, পূত্রবধূ ও নাতি-নাতিনদের নিয়ে একই বাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আরো আগেই সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে লিখে দিয়েছেন। ছেলেরাও আলাদাভাবে ব্যবসা বানিজ্য করে স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। আলোচিত বৃদ্ধ মোসলেম প্রধানের বড় ছেলে নবীর হোসেন উপজেলার ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় ছেলে আলী হোসেন খোকা, তৃতীয় ছেলে নুর হোসেন ও চতুর্থ ছেলে কামাল হোসেন। তরিকতপন্থী বৃদ্ধ মোসলেম প্রধান চট্রগ্রাম মাইজভান্ডার শরীফের একজন মুরিদ (অনুসারি)। আমন্ত্রিত অথিতিদের আপ্যায়নের ব্যয়ভার তিনি নিজেই বহন করেছেন।
মৃত্যুর আগেই নিজের চেহলাম আনুষ্ঠান করার ব্যাপারে মোসলেম প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, মনে অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল আল্লাহ যদি আমাকে অর্থশালি করেন তাহালে আমি মৃত্যুর আগেই প্রতিবেশী, নিজ গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামবাসীসহ আত্নীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াবো। বাড়িতে সাজসজ্জা ও ডেকেরেটর ভাড়া করে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের মতো প্যান্ডেল তৈরী করে বাড়িতে বসিয়ে আমি নিজ হাতে অতিথিদের আপ্যায়ন করব। আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেছেন। যতদিন বেঁচে থাকবো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আল্লাহ’র দেখানো পথে চলার ঘোষনা দেন তিনি।
এ ব্যাপারে গ্রামবাসী জানান, পরিবারের কেউ মৃত্যুবরণ করলে ৪ দিন পর বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আমরা কুলখানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। মোসলেম প্রধান মৃত্যুর আগেই নিজ গ্রামের পাড়া প্রতিবেশীসহ আশপাশের কামতাল, মালিভিটা, দশদোনা, হালুয়াপাড়া, আড্ডা শ্যামপুর, মহজমপুর ও যোগীপাড়া চিড়ইপাড়াসহ ১০ গ্রামের নারী-পূরুষ এবং পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁ উপজেলার আত্নীয়স্বজনসহ কয়েক হাজার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছেন। গত পনেরদিন আগে থেকেই প্রত্যেক ঘরে দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে এসেছেন মোসলেম প্রধানের চার ছেলে।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে গরু জবাইসহ রান্না বান্নার কাজ শেষ করে শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত শেষে আমন্ত্রিত অথিতিদের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়। শেষ হয় বিকাল চারটার দিকে। মৃত্যুর আগে নিজের নিজের খরচ নিজে করেছেন বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনায় এসেছেন এই বৃদ্ধ।