নোয়াখালীর অন্যায়, অনিয়ম, টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্য ও অপরাজনীতি’ বিরুদ্ধে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আশায় সন্ত্রাসী ও হত্যাকারীদের পালছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পদপদবীর জন্য মাথা নত করতে পারে। তিনি প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাই নোয়াখালীর সন্ত্রাসী ও হত্যাকারীদের পক্ষে তিনি কথা বলেন। কিন্তু আমি আবদুল কাদের মির্জা একদিনের জন্য তাকে ছেড়ে দেব না। তার বিরুদ্ধে কথা বলে যাব। আমি অস্ত্রবাজির রাজনীতি করি না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আপন ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আরও মন্তব্য করেন, ওবায়দুল কাদের পদপদবী রক্ষার জন্য নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে পারেন।
সম্প্রতি ভোটের অনিয়ম নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর ব্যাপক আলোচনায় এসে তিনি রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রথম বারের মতো রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করেন। পুরো সংবাদ সম্মেলনেই তিনি নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা করেন। তাদের সমালোচনা করতে গিয়ে কাদের মির্জা তার ভাই ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ আওয়ামী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের বিষোদগার করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রাজনীতি প্রসঙ্গে কাদের মির্জা বলেন, ‘দলের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের পরও তাদের পরিবারকে রাজাকার বলা হচ্ছে। প্রশ্ন রাখতে চাই, ওবায়দুল কাদের কি অপরাজনীতির হোতাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তা না হলে কেন একটা কেন্দ্রীয় নেতা প্রতিবাদ করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মুখ বন্ধ করার জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব ষড়যন্ত্র করছেন। চক্রান্ত করছেন। করোনার কারণে ওবায়দুল কাদের বাড়িতে যেতে পারে না। কিন্তু নিজাম হাজারী ও স্বপনের কী করোনা নাই? তারা কিভাবে তার বাসায় গিয়ে ফুল দিয়ে এসে নোয়াখালীতে ভোট ডাকাতি করে গেল?
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিনি সরকারি কর্মকর্তারা লুটপাট করছে দাবি করে বলেন, কিছু কর্মকর্তা মনে করেন আওয়ামী লীগকে তারা ক্ষমতায় এনেছেন। এ জন্য তারা যা ইচ্ছা তা করছেন।
কাদের মির্জা বলেন, ‘সরকারি কিছু কর্মকর্তা মনে করে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছে। যা ইচ্ছা তা করছে। লুটপাট করে খাচ্ছে দেশকে। এটা শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটা শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ পারবে না। দুর্নীতি শেখ হাসিনাকে বন্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে ভোটের রাজনীতিতে একটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। এদেশের প্রতিটি মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হকের হত্যাকাণ্ড নিয়েও কাদের মির্জা কথা বলেন। তাঁর মতে, একরামকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাকেও হত্যার জন্য নিজাম হাজারী এবং দিদার, স্বপন মিয়াজি পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারকে হত্যা ও উচ্ছেদ করার জন্য একরাম চৌধুরী ৫০ কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করেছেন।’
পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর এনামুল হক শামীমের সমালোচনা করে কাদের মির্জা বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটা টেন্ডার হয়েছে। সেই টেন্ডারটা উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের নির্দেশে এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরী এবং সেখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান জেহানের নিয়ন্ত্রণে ফেনীর লিফটন এই কাজ কিনে নিয়েছে। আমি বাধা দিয়েছি, বলেছি পুনঃটেন্ডার দিতে। তারা অন্যদের সিডিউল ফেলতে দেয় না। প্রত্যেকটা বিভাগে এটা চলছে। এখনো করে যাচ্ছে। লিফটন আমাকে বলে আপনার সাথে কথা আছে। টাকার লেনদেন করতে চায়। আমি কি টাকার রাজনীতি করি।
এই প্রসঙ্গে কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘এনামুল হক শামীম কেন আমাকে কল করে নেগোশিয়েশন করতে বলল? এতে কি বোঝা যায়? তারা আমাকে টাকা দিতে চায়? এ দেশের মানুষ জানে এনামুল হক শামীম কি করেন। কত হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।’
নোয়াখালীতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কাদের মির্জা। তিনি বলেন, নোয়াখালীতে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। যারা কাজ পেয়েছে তাদের রিমান্ডে আনেন। কত কোটি টাকা তাদের কাছ থেকে নিয়েছে? একটা কাজেরও মান নাই। তিনি আরও বলেন, আজকে কাজ করা হয়, কাজের কোনো মান নাই। ছয় মাস আগে কাজ করা হয় তিন মাস পরে একই অবস্থায় ফিরে যায়। কাজের মান নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মমাফিক টেন্ডার করতে বলেছি। সকল প্রকৌশলী বলেছেন, বিষয়টা তারা দেখবেন। কেবল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, আমার সঙ্গে কথা বলবেন। চারদিন হলো তিনি কথা বলেননি। সেই নির্বাহী প্রকৌশলী এখনও বহাল আছেন।
গাড়ি বহরে হামলা ও হত্যাচেষ্টা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবগতি করার বিষয়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি একটা দরখাস্ত দিয়েছি, এই ব্যক্তি আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন আমি পুলিশকে বলে দিচ্ছি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজকে পর্যন্ত আমার সাথে কি কেউ দেখা করেছে? সেই দরখাস্তের কী সমাধান। কী বিচার আপনারা করেছেন?
নোয়াখালীতে চাকরি বাণিজ্য প্রসঙ্গে কাদের মির্জা বলেন, একটা গরিবকে পুলিশে চাকরি দিয়ে একরাম চৌধুরী পাঁচ লাখ টাকা নেন। গরিব প্রাইমারি স্কুলের পিয়নকে চাকরি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নেন। প্রশাসনকে তারা নানাভাবে ব্যবহার করে এই কাজগুলো করছে।
তিনি বলেন, নোয়াখালীতে সচিব (ইউনিয়ন পরিষদ সচিব) দিছে ১০ জন। এই নিয়োগে একরাম চৌধুরী, সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত ও সোহেল বাণিজ্য করেছে। এখনো সেখানে চাকরি বাণিজ্য চলছে। একরাম চৌধুরীর অস্ত্রে ২৪টি মায়ের বুক খালি হয়েছে বলেও দাবি করেন মির্জা কাদের।
নোয়াখালীতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দ্বন্দ্বের কারণে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আপনাকে দিয়ে এসব করাচ্ছেন কিনা-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কাদের মির্জা বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। এগুলো মিথ্যাচার। নোয়াখালীতে সবগুলো অপরাজনীতির হোতা। একটা একরাম চৌধুরী পরিবর্তন করে আরেকটা একরাম চৌধুরী সেখানে আসুক এটা আমি চাই না।
সংবাদ সম্মেলন যাতে না করেন এজন্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের দিয়ে ধমক দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা গাড়ি বহরে আক্রমণ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাদের পরিবারকে যারা রাজাকার পরিবার বলেছে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।