লালমনিরহাটের টগবগে যুবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র ঈমাম হোসেন ইমু (২৩)। বছর তিনেক আগে পরিচয় হয় এক তরুণীর সঙ্গে। ফোনালাপ থেকে ফেসবুক চ্যাটিং তারপর চলতে থাকে চুটিয়ে প্রেম। অবশেষে তিন বছর পর বিয়ে। তারপর নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
সেই সূত্র ধরেই স্বামীর স্বীকৃতি আর স্ত্রীর অধিকারের দাবিতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানায় এসে হাজির হন বরগুনার সেই তরুণী। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় লিখিত অভিযোগ করেন হাতীবান্ধা থানায়। তরুণীর অভিযোগের আলোকে হাতীবান্ধা থানা সূত্র জানায়, তিন বছর আগের কথা। ফেসবুকে বরগুনা সদর উপজেলার চরকলোনী এলাকার ওই তরুণীর সঙ্গে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাংগা উইনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম হোসেন খলিফার ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ঈমাম হোসেন ইমুর পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে উভয়ের মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর প্রেমের সম্পর্ক। চলতে থাকে তিন বছর ধরে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মেয়েটির বরিশালে বসবাসকারী খালার বাসায় তাদের বিয়ে হয়। সেখানে মাস ছয়েক ঘর সংসার করার পর তারা চলে আসেন ঢাকায়।
সেখানে ভালোই চলতে থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন। ভাড়া বাসায় থাকেন পাচ মাস। সেখানে বসবাসের দু’মাসের মাথায় গর্ভবতী হয়ে পড়েন তরুণী। কিন্তু তার স্বামী ঈমাম হোসেন ইমু সুকৌশলে গর্ভপাত ঘটান। এরপর কদিন কাটতে না কাটতেই তাদের মাঝে চলতে থাকে নানা মতবিরোধ যা মারাত্মক তিক্ততায় রূপ নেয়। এ অবস্থায় তরুণীকে ঢাকায় একাই রেখে নিজেকে আড়াল করে ঈমাম হোসেন ইমু। চলে আসে নিজের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাংগা গ্রামে।
ঢাকায় তার কোনো রকম সন্ধান মিলাতে না পেরে কঠিন সমস্যায় দিন পার করতে থাকেন তরুণীটি। এরপর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঈমাম হোসেন ইমুর টংভাংগা গ্রামে চলে আসেন তরুণী। বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেয়ে সরাসরি উঠে পড়ে ইমুদের বাড়িতে। ওই বাড়িতে ওঠার পর ইমুর বাবা মেয়েটিকে তার নিজ বাড়িতে আশ্রয় না দিয়ে পাশের গ্রামে তার বর ছেলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এরপর নেমে আসে তার ওপর কালো মেঘের ছায়া। চলতে নাকে অমানবিক আচরণ। তারা সাফ মেয়েটিকে জানিয়ে দেয় এসব কথা এলাকায় কোনো ব্যক্তিকে না জানিয়ে ফিরে যেতে হবে তাকে তার ঠিকানায়। এতে রাজি না হলে দুর্ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যায়। তারা মেয়েটিকে চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখতে থাকে। এতেও রাজি না হলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালান তারা। এতেও ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে তাকে হত্যার হুমকিসহ নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন স্বামী ইমুসহ তার পরিবারের লোকজন। এক রকম ফিল্মি কায়দায় তারা ওই তরুণীর কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুকের আল্টিমেটাম দিয়ে জোরপূর্বক একটি নৈশ কোচে ঢাকা পাঠিয়ে দেন। বলা হয় তিন লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে এলে তাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেবে তারা। এসব কথা উল্লেখ করে তরুণীটি থানায় অভিযোগ পত্রটি দাখিল করেছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করছেন হাতীবান্ধা থানার ওসি তদন্ত মো. রফিকুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই থানার এসআই মো. আঙ্গুর মিয়া জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বৃহস্পতিবার বিকেলে মেয়েসহ, স্থানীয় একজন সাংবাদিক ও একটি সংগঠনের একজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ঈমাম হোসেনদের বাড়িতে যাই। সেখানে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর ইমুর বাবা বিষয়টি নিয়ে আপস মীমাংসার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে কয়েক দিনের সময় চাইলে আমরা সময় দেই। এতে কোনো ভালো সমাধান না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তবে তরুণীটি বর্তমানে কোথায় কীভাবে রয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি জানান, হাতীবান্ধার বড়খাতা এলাকার একজন সাংবাদিকের বাড়িতে রয়েছে। তবে বর্তমানে ওই তরুণীর অবস্থান কী? কিংবা কোথায় রয়েছে? সেটি জানতে ওই সাংবাদিককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়ায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।