[ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি ছিনতাই বেড়েই চলছে : পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আর্কষণ]
কুমিল্লা ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কে যাত্রী ওঠানামার বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ী নিয়ে যাত্রীবেশে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম এ তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা হচ্ছেন, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কিনাই মোল্লার ছেলে আফজাল হোসেন (৩৮), চাঁদপুর সদরের দয়ালতি গ্রামের মো. লিটনের ছেলে রনি (৩৫) ও কল্যানদি গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে জহির হোসেন (৩৯)। গ্রেফতার তিন আসামিদের মধ্যে আফজাল হোসেন এর আগে চান্দিনা দাউদকান্দি এলাকায় ৫/৬ টি ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে।
পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম বলেন, গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা একটি প্রাইভেটকার যার নাম্বার (ঢাকা মেট্রো-গ-৩২-৩২৮৮) নিয়ে চলতি মাসের ২৪ জানুয়ারি বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বিশ্বরোড এলাকার ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানোর জন্য ডাকাডাকি করেন। এসময় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (সমন্বয়) ও ইনচার্জ মো. মোর্শেদ আজম বাকী বিল্লাহ প্রাইভেট কারে উঠেন। ওই প্রাইভেটকারের ভিতরে তিনজন যাত্রীবেশে বসা ছিলে।ভিকটিম গাড়ীতে ওঠার পর চালক প্রাইভেটকারটি নিয়ে ঢাকা অভিমুখে রওনা দিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়ীতে থাকা যাত্রীবেশী ডাকাত দলের সদস্যরা তার হাত পা বেধে জিম্মি করে তার পকেটে কোন টাকা না পেয়ে মারধর করে স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আনতে মারধর করতে থাকে, এ সময় ভিকটিম বাঁচার জন্য ডাকাতদের দেওয়া দুটি বিকাশ নম্বরে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাত ৮টার দিকে মহাসড়কের দাউদকান্দি এলাকার সোনালী আঁশ কারখানার সামনে প্রাইভেট কার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ভিকটিমকে। এ ঘটনায় ভিকটিম দাউদকান্দি থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দাউদকান্দি থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন সঙ্গীয়ফোর্সসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম যৌথভাবে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে ঢাকার কেরানিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ধৃত আসামিরদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ছদ্মবেশে ব্যবহার করা সাংবাদিকতার ভুয়া আইডি কার্ড ও বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। ধৃত তিন আসামির সাথে ঘটনায় জড়িত দীপু নামের অপর এক ডাকাত পলাতক রয়েছেন।
ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা আতংকিত!
এর আগেও ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছদ্মবেশ ধারন ও যাত্রীবেশে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে, বিভিন্ন তথ্য সুত্রে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুই চারটি ঘটনা পুলিশের নজরে আসলেও বেশি সংখ্যক ঘটনা বিভিন্ন আইনগত জটিলতার জন্য ভিকটিম পুলিশের নিকট যেতে আগ্রহী নয়, এতেই অনেক ঘটনা পুলিশের নজরে আসে না।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে চানিন্দা কাঠেরপুল স্টেশনের মহাসড়কে যাত্রীবেশে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় মোহম্মদ আলী(৫৬) নামের এক আলু ব্যবসায়ি চান্দিনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাঠেরপুল মহাসড়কে অপেক্ষায় থাকে, এ সময় একটি নোয়া মাইক্রো যাত্রীবেশে থামালে তিনি গাড়ীতে ওঠে চান্দিনা স্টেশনে নামিয়ে দিতে বলেন, এরমধ্যে গাড়ীতে যাত্রীবেশে থাকা তিনজন তাকে হাতপা বেধে ফেলে ও তার সাথে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে চলন্তগাড়ী থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আরোও পাচঁ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে স্বজনদেরকে ফোন দিতে বলে, একপর্যায়ে ভিকটিম ক্যানসারের রোগী চিকিৎসায় জায়গা জমি বিক্রি করে নি:শ্ব হওয়ার কথা জানায়, তারপরও ডাকাতদের মন গলেনি বিভিন্ন অংকের টাকা দাবী করে একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ভিকটিম তার ছেলেকে কল দিয়ে ডাকাতদলের দেওয়া একটি বিকাশ নাম্বারে দ্রুত বিশ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য বলেন, তখন ভিকটিমের ছেলে বিকাশে টাকা পাঠায়, টাকা পেয়ে ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় প্রাইভেটকার থামিয়ে ভিকটিমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় তারা, এ ঘটনায় চান্দিনা থানার ওসিকে জানালে বিভিন্ন অজুহাতে ঘটনাস্থল ভিন্ন থানা বলে নানা অযুহাত দেখান।
অন্য একটি ঘটনায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সকালে কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট এলাকায় মহাসড়কে অপেক্ষারত এক ব্যবসায়িকে যাত্রীবেশে মাইক্রোতে ওঠিয়ে নেয়।এক মিনিটের মাথায় যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতদলের সদস্যরা তাকে জিম্মি করে সাথে থাকা নগদ চল্লিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত গাড়ী থেকে ফেলে দেয়। এছাড়াও ডিসেম্বর মাসে মহাসড়কের মিয়া বাজার , চৌদ্দগ্রাম, সুয়াকাজী, নিমসার, চানিন্দা, ইলিয়টগঞ্জে একই কায়দায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দেবীদ্বার এলাকার আওয়াল নামের এক ব্যবসায়ি বলেন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত মহাসড়কের ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার পুর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কুমিল্লার নবাগত পুলিশ সুপার ফারুক আহেমদের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।