ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার আর নেই। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চানপুরের নিজ বাড়িতে শনিবার সকাল ৭ টায় বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
আলী তাহের মজুমদারের জন্ম ১৯১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি (সনদ অনুযায়ী)। বাবার নাম চারু মজুমদার, মা সাবানী বিবি। পরিবারে পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয়।
অতীতের ভাষা আন্দোলনে আলী তাহের মজুমদারের অবদান : ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় মূলত ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে। পাকিস্তানের জিন্নাহ সাহেব যখন ঢাকায় এসে বললেন, উর্দুই হবে এ দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তাৎক্ষণিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জিন্নাহর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান।’
তিনি বলেন, ‘১৯৪৮ সালে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিক থেকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে একটি মিছিল আসে। এ খরব শুনে যুবলীগ ও তমুদ্দীন মজলিসের কর্মীরা এবং কুমিল্লার স্কুল কলেজের ছাত্ররা পাল্টা মিছিল বের করেন। এই মিছিলে তারা উর্দু ভাষার বিপক্ষে প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি হয়। এতে বেশ ক’জন আহত হন।’
‘ফলে উর্দু ভাষার পক্ষে মিছিলকারীরা ঐ সময় কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা ও কুমিল্লায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে প্রায় মিছিল হতো। আর এই আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ রূপধারন করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে।’
তাহের মজুমদার আরও বলেন, ‘অতীন্দ্র মোহন রায় এসে আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে রফিক, জব্বার ও বরকত সহ আরও অনেকে নিহত হয়েছেন। এই কথা শোনার পর আমিসহ অনেকে কুমিল্লার সকল স্কুল, কলেজের ছাত্রদেরকে ভাষা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পরার আহ্বান জানাই।’
তখন রাজগঞ্জ রাণীর বাজারসহ পুরো কুমিল্লায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই স্লোগান নিয়ে তারা কঠিন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর এই আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রধান ভূমিকায় সক্রিয় ছিলেন আলোচিত ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার। আজ ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ বছর পরও মানবেতর জীবন যাপন করেছেন এই ভাষা সৈনিক। ২৩ জানুয়ারি শনিবার সকাল ৭ টায় বার্ধক্যজনিত কারণে ভাষা সৈনিক আলী তাহের মজুমদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।