পুলিশের প্রতি মানুষের অনেক প্রত্যাশা বেড়েছে, মানুষের সাথে কোন মতেই খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। তোমার ব্যবহারের উপর নির্ভর করে পুরো বাহিনীর সম্মান। রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ডিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল, নায়েক ও এএসআইদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।
রবিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ১০.৩০ টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ডিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল, নায়েক ও এএসআইদের কল্যাণ ও জনসাধারণের সাথে আচরণবিধি সম্পর্কিত আলোচনায় এমন নির্দেশনা দেন আইজিপি।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, ২ লক্ষ ১২ হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যা কনস্টেবলদের, এরপর এএসআই ও এসআইদের বড় একটি সংখ্যা রয়েছে। এই বড় অংশের সবাই ঠিক থাকলে বাহিনীও ঠিক থাকবে। কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, তুমি বাহিনীর কনিষ্ঠ সদস্য হলেও তুমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ১০ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হয়েছে। তোমরা যত বেশি ভালো কাজ করবে, তত ভালো থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা যা কিছু করি দেশের জন্য করি। দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে আমরা রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যবসা ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিতে পেরেছি বলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১২ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ৫৪৬ ডলার থেকে ২০১৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আইজিপি বলেন, মানুষের স্বপ্নের দ্বার উন্মুক্ত। আমরা বিভাগীয় শহরে ৮টি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক দিয়ে আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানো হবে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে হার্টে রিং বসানো, ডায়োলাইসিস ও ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত করা হচ্ছে।
সৎভাবে জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়ে আইজিপি বলেন, সন্তানকে বড় হওয়ার প্রেরণা দেও, তাকে মানুষের মত মানুষ বানাও। যাদের কাছে অবৈধ অর্থ আছে তাদের সন্তান ভালো মানুষ হয় না। আয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ ব্যয়ের অভ্যাস তৈরি করলে সৎভাবে জীবনযাপন করা যায়।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, করোনাকালে ভালো কাজ করেছ বলে মানুষ পুলিশকে মাথায় তুলে রেখেছে। করোনার সময়টায় পুলিশের সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে নাম না জানা অনেক মানুষ পুলিশ সম্পর্কে পজিটিভ দিক তুলে ধরেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের ৭৪ জন পুলিশ সদস্য শাহাদতবরণ করেছে। ২০ হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
মাদকের সাথে সম্পর্কে থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমাদের কোন সদস্য মাদক খাবে না এবং এর সাথে সম্পৃক্ত হবে না। যারা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে তাদের ছাড় না দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের আয়না উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, তোমরা এখানে কাজ করতে পেরে গর্ববোধ করতে পারো। তোমরা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে মানুষের সম্মান আদায় করতে পারো। এই শহরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বসবাস করেন। পুলিশের কাজ সকলের সন্তুষ্টি অর্জন করে কাজ করা। সর্বক্ষেত্রে শক্তি ব্যবহার না করে মাথার বুদ্ধি ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা এই চাকরিটা গর্বের সাথে করতে চাই, মানুষের সামনে বুক ফুলিয়ে বলতে চাই আমি পুলিশ। আমাদের কাজের জন্য মানুষ আমাদের সম্মান করবে।
অন্যদিকে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, আমাদের উপরে মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস আছে, তা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আমরা কঠোর হয়ে কাজ করবো। কারও দুস্কর্মের ফলে পুলিশ বাহিনীর ইজ্জত ও সম্মান নষ্ট হবে এটা আমরা কখনও হতে দিবো না।
কমিশনার আরও বলেন, করোনায় ডিএমপির ২৪ জন পুলিশ সদস্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আইজিপি স্যারের দিক নির্দেশনায় কোভিড চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়াসহ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সিনিয়র অফিসারদের দিয়ে নিয়মিত করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণরোধে ডিএমপির প্রত্যেক সদস্যকে মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে।
এর আগে কনস্টেবল , নায়েক ও এএসআইদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন সদস্য আইজিপি মহোদয়ের নিকট বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাদের মতামত ও সমস্যা সমুহ জানায়।