কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নে বুড়বুড়িয়া গ্রামের দুই বোনের এক প্রেমিক। এর মধ্যে বড় বোন তানিয়া আক্তার বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে।খাড়াতাইয়া গাজীপুর গ্রামের প্রেমিক নাঈমকে দায়ী করে মঙ্গলবার বুড়িচং থানাতে মামলা করেছে নিহতের পরিবার।নিহত তানিয়া আক্তার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে ও সোনার বাংলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।
সরেজমিনে ঘুরে ও নাঈমের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, একই ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া গ্রামের মৃত রোস্তম আলীর ছেলে ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স ৪র্থ বষের ছাত্র মো: সাইদুজ্জামান নাঈমের সাথে নিহত তানিয়ার ছোট বোন রীমির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।এই সুবাদে প্রায় সময় বড় বোন তানিয়ার সাথে কথোপকথন হতো নাঈমের।বেশ কিছুদিন পর রীমি ও নাঈমের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যায় উভয়ের পরিবারের অভিভাবকরা।তাদের প্রেমের বিষয়টি নিয়ে একে অপরকে দায়ী করে অভিভাবকদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়ে প্রেমের সম্পর্ক দূরত্ব হয়ে যায়।এই ফাঁকে ছোট বোনের খোঁজখবর রাখতে গিয়ে বড় বোন তানিয়ার সাথে কথোপকথন শুরু করে নাঈমের।এই ভাবে কথা বলতে বলতে নাঈমকে ভালোবেসে ফেলে তানিয়া।
নাঈমের বড় ভাই কামরুজ্জামান জানান, তানিয়ার মৃত্যুর কিছুদিন আগে খবর দিলে নাঈম রাতে তানিয়ার বাড়িতে চলে যায়।ঠিক তখনই টের পেয়ে তানিয়ার ভাই নাঈমকে আটক করে রাখে এবং গরু চুরির অভিযোগ এনে বাড়িতে খবর পাঠায় তানিয়ার অভিভাবকরা।ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথে আমরা চলে যাই তানিয়ার বাড়িতে।তখনই জানতে পারি তানিয়ার ও নাঈমের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি।তখন তানিয়ার সাথে নাঈমের আর সম্পর্ক থাকবেনা এমন কথা বলে আমরা বিষয়টি সাথে সাথে মিটমাট করে নাঈমকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর শাসন করি এবং হাতের মোবাইলটি জব্দ করি। এর কিছুদিন পর অর্থ্যৎ মৃত্যুর আগে নাঈমের মোবাইলে কল দিয়ে না পাওয়ায় বড় ভাই পিন্টুর বউয়ের মোবাইলে কল ও ম্যাসেজ দিতে থাকে তানিয়া। ম্যাসেজে লেখাগুলো হলোঃ ”তুই তো আমার সাথে কথা না বলে একটা দিনেও থাকতে পারছ না, কি ভাবে থাকতে পারছ এতোদিন কথা না বলে”।,”আমি তোর ভয়েসটা শোনার জন্য কল দিছিলাম, আমার শোনা হয়ে গেছে”।এই ম্যাসেজ গুলো তানিয়ার পরিবারকে দেখানো হয় এবং বিয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয় তানিয়ার পরিবারকে। কিন্তু তানিয়ার পরিবার আমাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে মেয়েকে শাসন করতে শুরু করে। একটি মাধ্যমে শুনেছি শনিবার আত্মহত্যার কয়েক ঘন্টার আগে তানিয়ার বাবা আবু তাহের ও তার চাচা এবং জেঠাতো ভাই মামুন ও মাসুম মাস্টার তাকে শাসন করে এবং মারধর করে। এই জিত অপমান সহ্য করতে না পেরে ঘরের রুমের ভিতরে রাখা বিষ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, ঘরের মধ্যে তানিয়া বিষ পান করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় বমি করার সময় ছোট ভাই দেখে কান্নাকাটি করলে বাড়ির সবাই এসে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়, এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ বিষয়ে সাংবাদিক নিহত তানিয়ার বাড়িতে গেলে বাবা ও মা কেউ ক্যামেরার সামনে আসতে ও কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে নাঈমের বড় ভাই কামরুজ্জামান মিঠু বলেন,তানিয়ার আত্মহত্যার পর থেকেই নাঈমকে মামলার হুমকি দিয়ে আসছে এবং কিছু টাকাও দাবী করেছে। হুমকির ভয়ে আমার ভাই পালিয়ে যায়।তাকে এখন খুঁজে পাচ্ছি না।তানিয়াকে উত্যক্ত করতেন এমন অভিযোগ এনে শুনেছি আমার ভাইকে আসামী করে নিহতের পরিবার থানায় মামলা করছে। বুধবার আমাদের বাড়িতে পুলিশও এসেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বুড়িচং থানার এসআই মোঃ ইমরুল জানান, শনিবার নিহত তানিয়ার মরদেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তানিয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয় : ময়নাতদন্তের রির্পোট পাওয়ার পর বিস্তারিত বুঝা যাবে। সুত্র:আজকের কুমিল্লা।