কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় বিএনপির কর্মী সভাস্থলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নে বিএনপি আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গুলিও ছুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ শনিবার (২৬ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙা বাজার ও উন্দানিয়া গ্রামস্থ বিএনপি নেতা মফিজুর রহমানের বাড়িতে আয়োজন করা সভাস্থলে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় বিএনপির দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছে।
এরই মধ্যে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে। তবে আওয়মী লীগের নেতাকর্মীরা এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের ভাষ্য, বিএনপির নেতাকর্মীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এদিকে হামলার সময় উন্দানিয়া গ্রামে বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানায়, শনিবার বেলা ৩টায় উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের বাড়িতে কর্মী সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর। দুপুর ২টার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াতউল্লাহর নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গৈয়ারভাঙা বাজারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ওই বাজারে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে তারা গৈয়ারভাঙা বাজার থেকে উন্দানিয়া গ্রামে গিয়ে বিএনপি নেতা মফিজুর রহমানের বাড়িতে আয়োজিত সভাস্থলের মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় বিএনপির নেতা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। ঘটনার সময় আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি করে পালাতে থাকে। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারীরা গুলি চালানো শুরু করে। এতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মনির হোসেনের মাথায় গুলি লাগে এবং তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়।
এ ছাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ খানের পায়ে ও পেটে গুলি লাগে এবং তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ দুজনসহ অন্তত ২২ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। হামলায় আহতদের মধ্যে উলামা দল নেতা আবদুর রহমান, বিএনপি নেতা হাফেজ বেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ফজলুর রহমান মিন্টুসহ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। পরে দ্রুত গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শরিফ বলেন, ‘একজনের পায়ে ও হাতে এবং আরেকজনের মাথায় ছররা গুলি লেগেছে। তারা এখন আশঙ্কামুক্ত। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়েছি।’
খবর পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধসহ আহত নেতাকর্মীদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে জানিয়ে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন ও আয়াতউল্লাহর নেতৃত্বে এ হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমরা কি কর্মী সভাও করতে পারব না তাদের কারণে? এর আগেও একই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নে আমার কর্মী সভা ভণ্ডুল করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে হামলা করছে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান শাহীন বলেন, ‘বিএনপির লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে। এতে আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আমরা কোনো হামলা করিনি। এ ছাড়া অস্ত্রের মহড়া ও গুলি চালানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
লালমাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ পরান সওদাগর বলেন, ‘আমরা হামলা করিনি। বরং যুবদল নেতাকর্মীদের হামলায় আমাদের ছাত্রলীগ নেতা আরজু, মাইনুল, মাছুম, রায়হানসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে মাইনুলকে কুমিল্লা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।’
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ সরকার বলেন, ‘বেলঘর উত্তর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সুত্র: কাক