কলমাকান্দার ভূমি কার্যালয়গুলোতে ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। টাকা না পেলেই সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি করেন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের সহযোগিতা করছে দালাল চক্র। এর প্রতিবাদ করেও সুফল মেলে না, উল্টো হয়রানি বাড়ে।
জমির নামজারি, ডিসিআর, মিসকেসসহ জমির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে যান স্থানীয়রা। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না চাইলেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় নামজারি ও মিসকেস নিয়ে। অথচ ভোগন্তি কমাতে ই-নামজারি চালু করেছে সরকার। একজন নামজারি গ্রহীতাকে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তার হার্ড কপি কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে জমা দিতে হয়। আবার জমির সব সেবার জন্য নিয়ম অনুয়ায়ী লিখিত অবেদনও জমা দিতে হয়। তারপর শুরু হওয়ার কথা ফাইলের কার্যক্রম।
নিয়ম অনুযায়ী, আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর ডিসিআরের জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা জমা দিলে জমির নামজারি হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৮ দিন সময় লাগার কথা। কিন্তু উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কিছু দালালসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতি নামজারিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয় সেবা গ্রহীতাদের। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে দিনের পর দিন ভূমি কার্যালয়ে ঘুরতে হয়। আবার টাকা না দিলে শুনানির নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আবেদন নামঞ্জুর করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নাজিরপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের ভুক্তভোগী রাজিয়া বেগম জানান, গাখাজুরা মৌজায় স্বামী ও তাঁর নামে প্রায় পাঁচ একর জমি আছে। গত জানুয়ারি মাসে রাজিয়া নাজিরপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে জমির নামজারি করতে যান। সেখানে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মীর মাসুদ তাঁর কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চান। পরে অবশ্য ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু রাজিয়া সেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় এখনও নামজারি করতে পারেননি। তবে কাগজপত্র জমা দিয়ে রেখেছেন।
ডোয়ারিকোনা গ্রামের আবুল কালামের ভাষ্য, তাঁর খারিজের শুনানির জন্য খুদে বার্তার মাধ্যমে তারিখ জানানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খারিজটি নামঞ্জুর করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে চারবার এমন হয়েছে।
কথা হয় খারনৈ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মৌজার জালাল মিয়ার সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, জমিজমা নিয়ে আদালতে তাঁর একটি মামলা চলছিল। এ নিয়ে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। কেশব লাল দেব আদালতে সঠিক প্রতিবেদন পাঠাবেন বলে তাঁর কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু আদালতে যে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়, সেটি সঠিক নয়। পরে ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে ফের মামলা করতে বলেন।
তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছনে সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব। তাঁর দাবি, আদালতে যে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে যা সঠিক তাই দেওয়া হয়েছে।
সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নাজিরপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মীর মাসুদ। তিনি বলেন, নামজারি করা নিয়ে কারও সঙ্গে টাকার চুক্তি হয়নি তাঁর।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহীদুল ইসলাম জানান, ভূমি কার্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানা নেই তাঁর। এ নিয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুনানির আগেই আবেদন নামঞ্জুর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনানির জন্য সফটওয়্যারের নির্দেশ অনুযায়ী সেবা গ্রহীতাদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা যায়। তার সঙ্গে অফিসের তারিখের অনেক সময় মিল থাকে না। তাই উভয় ক্ষেত্রে তারিখের ভিন্নতার কারণে সেবা গ্রহীতা অফিসে উপস্থিত না থাকলে এবং কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তা নামঞ্জুর করা হয়।