বগুড়া আদমদীঘির সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের পাশে অবস্থিত স্টার হোটেল এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী ফিরোজ আহম্মেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ে লটারি না দিয়ে আবারো সময় বাড়িয়ে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
ফলে হোটেলের উদ্বোধনী লটারি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন আদমদীঘি থেকে খেতে আসা কয়েকজন ভোক্তা। হোটেল কর্তৃপক্ষ উদ্বোধনের সময় আকর্ষণীয় পুরস্কার ঘোষণা করার পর সেখানে একাধিকবার খেতে আসা আদমদীঘির কদমা গ্রামের আজিজুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, খাদেমুল ইসলামসহ কয়েক জন ভোক্তার সাথে কথা হয়। তারা বলেন, খাইতে এসে এভাবে তাদের কাছে প্রায় শতাধিক লটারির টিকেট জমা হয়েছে। কিন্তু আজো হলো না লটারির ড্র। আদৌও এই ড্র হবে কিনা তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। তাই সময় পার হওয়ার পর চলতি বছরের ৭ই জুলাই তারিখের ব্যানার টাঙ্গানো ও শুধুমাত্র একটি মোটর সাইকেল প্রদর্শন করে রাখা হয়েছে হোটেলের সামনে। তবে মজার বিষয় লটারি ড্র এর তারিখ উল্লেখ করলেও কবে হবে ড্র সে সম্পর্কে নিজেই জানেন না ফিরোজ আহম্মেদ চৌধুরী। তাই লটারির মাধ্যমে ভোক্তাদের সাথে আবারো প্রতারণার পাঁয়তারা করার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলার আদম দীঘি উপজেলার সান্তাহারে গত বছরের নভেম্বর মাসে স্টার হোটেল এন্ড চাইনিজ নামের একটি খাবারের হোটেল উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় বেশি বিক্রির আশায় ভোক্তার সমাগম ঘটনার জন্য ১১১টি আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে এক উদ্বোধনী র্যাফেল ড্র এর আয়োজন করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। সে সময় কর্তৃপক্ষ সর্বনিন্ম ২ শত টাকার খাবার নিলে একজন ভোক্তাকে একটি লটারি ড্র এর টিকিট দেয়। র্যাফেল ড্র এর টিকিটের তারিখ অনুযায়ী ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় ছিলো উদ্বোধনের পর একই বছরের ৩১ শে ডিসেম্বর। কিন্তু এই র্যাফেল ড্র নির্ধারিত সময়ে আর অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই কারো ভাগ্যেও জোটেনি আকর্ষণীয় পুরস্কার। অথচ হোটেল উদ্বোধন হওয়ার প্রায় ৬ মাস পার হলেও উদ্বোধনী রাফেল ড্র করার কোনো সদিচ্ছাই নেই হোটেল কর্তৃপক্ষের এমনটাই বলছেন ভোক্তারা।
এদিকে তাদের প্রতারণার বিষয়টি গত কয়েক দিন আগে আলোচনা হলে হোটেল কর্তৃপক্ষ নাম মাত্র একটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে হোটেলের সামনে প্রদর্শণী হিসেবে রেখে দিয়েছে। মোটরসাইকেল প্রদর্শণী রেখে হোটেল কর্তৃপক্ষ আবারো ভোক্তাকে টিকিট দিচ্ছে। ফলে ২য় বার ২০০ টাকার বেশি খেলেও অনেকে আর ইচ্ছেকৃত ভাবে লটারির টিকিট নিচ্ছেন না। কেউ কেউ অভিযোগ ও কৌতুহল করে বলছেন এবারো মনে হয় লটারি দিবে না, প্রতারণা করবে।
ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের নিমাইদীঘি গ্রামের মিলন হোসেন নামের এক ভোক্তা বলেন, আমি ব্যবসা করি। ব্যবসায় যে দিন লাভ ভালো হয়, সেদিন আমরা কয়েক বন্ধু মিলে হোটেল স্টারে খেতে আসি। ইতিপূর্বের প্রায় ৫০ টার মতো টিকিট আছে। লটারির তারিখ পার হওয়ার পর ড্র অনুষ্ঠিত হয়নি, তাই কেউ কেউ টিকিট হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও আমরা খেতে আসি। তবে এখন আর টিকিট নেয় না। কারণ টিকিট নিয়ে কি করবো? ড্র হবেই কিনা। ২০০ টাকার খেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা খেতে বসলে ২৫-২৬শ টাকা বিল হয়, তাহলে এতো দিনে আবার কতো গুলো টিকিট জড়ো হতো বলেন? প্রশ্ন করেন তিনি। লটারি দেয় না। কি করবো টিকিট নিয়ে। টিকিট দিয়ে লটারির নামে এটা একটা প্রতারণা।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা থেকে খেতে আসা আলাল হোসেন, সবুজ হোসেনসহ অনেকে বলেন, আগের স্টার হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের খাইতে আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো নতুন ভাবে চালু করার পর আমরা খাইতে এসে জানতে পারি ২০০ টাকার খাবার খেলে একটি রাফেল ড্র এর টিকিট পাওয়া যাবে। এভাবে বেশ কিছুদিন ঐ হোটেলে খেয়ে ৪ টি টিকিট পেয়েছি। আলাল হোসেন আরো বলেন, ড্র হওয়ার তারিখ পর্যন্ত টিকিট গুলো যত্ন করে রেখেছিলাম। ড্র না হওয়ায় টিকিট গুলোর প্রতি আর মায়া নেই। তবে এখনো অনেকের কাছে টিকিট আছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে হোটেল স্টার এন্ড চাইনিজের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ আহম্মেদ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আমি ওসি ও ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে অচিরেই লটারি দিবো। যারা টিকিট হারিয়ে ফেলেছে তারা কি করবে এই প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা এসে বললেই আরো একটি করে টিকিট দিবো। আবারো প্রতারণা করবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মোটরসাইকেল কিনে এনেছি। সামান্য তিল লাখ টাকা লাগবে। এবার লটারি ড্র দিয়ে দিবো।
ভোক্তাদের সাথে লটারি নামক প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার মুঠোফোনে বলেন, আমরা অবৈধ লটারির অনুমতি কিভাবে দিতে পারি ? আর অবৈধ লটারির ব্যাপারে আমরা তো কিছুই জানি না।