মুক্তি রাণী বর্মনের ‘মুক্তি’ হ’ল।
ষোড়শী, স্কুলে প্রবেশিকায় পাঠরত,
স্কুল শেষে ফিরছিলো উচ্ছ্বল আনন্দে
বান্ধবীদের সাথে, হেসে খেলে।
পথিমধ্যে পথরোধ করে এক বখাটে যুবক।
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা, বাউশী ইউনিয়ন
প্রেমনগর ছালিপুরা। গন্ড যদি নাও বলি,
গ্রামতো নিশ্চয়ই। পৌঁছেছে সেখানেও
গাঁজা,ভাঙ, মদ, হিরোইন, ইয়াবার ভয়ঙ্কর নেশা।
পৌঁছেছে আগেই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প।
কাউসার, তরুন। কুবিদ্যায় ঠাসা। আছে নেশার আবেশ, বয়সের থেকেও যৌবনের কুৎসিত জ্বালা বেশী। সংখ্যায় লঘুদের প্রতি কু-আচরনে হয়না কিছুই, সে কথা সে ভালো করে জানে। পরিবার সমাজ
থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সে সব জানা কথা।
বড় বোনের পেছনে ঘুরেছে বেশ কিছু দিন।
উগারিছে কামনার বহ্ণি নোংরা অশ্রাব্য ভাষায়।
অসহায় মেয়েটি অভিযোগ করেছিল কাউসারের পিতার সমীপে। বিচার তো দূরের কথা, সমাধান ও পায়নি কিছুই। পালিয়ে বেঁচেছে সে দূর শহরে।
অত:পর ছোটো বোন মুক্তির পিছনে। ইনিয়ে বিনিয়ে প্রেম নিবেদন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কুকুরের ঘেউ ঘেউ। দূর্গন্ধ মেশানো ভাষায় জানিয়েছে নিষিদ্ধ ইশারা।
সাড়া মেলেনি। তারপর বেরিয়েছে হিংস্র কদর্য রূপ। গালাগালি তুলাতুলি, হুমকি।
স্কুল থেকে বান্ধবীদের সাথে ফেরার পথে
রোধ করে পথ। অতর্কিতে বের করে আনে
জামার ভিতর পিঠে লুকানো ধারালো অস্ত্র।
ক্ষিপ্ত হায়েনার মত ক্রোধান্বিত, নির্মম, নিষ্ঠুর
দ্রুত হাতে মুক্তিকে কোপাতে থাকে এলোপাথাড়ি।
অস্ত্রের আঘাতে ছিন্ন বস্ত্র ভেদ করে বেরিয়ে আসা
মুক্তির স্তন দেখে কামনার লালা ঝড়ে কাউসারের। ফালা ফালা হয়ে যায় মুক্তির শরীর। রক্তের স্রোতে ভেজে মাটি, ফিনকির রক্ত ছিটে থোকা থোকা ভিজে যায় বান্ধবীদের স্যালোয়ার কামিজ ওড়না।
রক্তমাখা অস্ত্র হাতে কাউসার পালিয়ে যায়।
গ্রামের লোকেরা জানে, প্রতিবাদ করেনি আগে।
প্রতিরোধ ও করেনি কেউ। মারা গেছে মুক্তি। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, নিয়ে যায় ম্লান মুখে।
চিকিৎসক মৃদুস্বরে ঘোষনা করে ‘মুক্তি মৃত’।
যৌন উন্মাদনা, কামনার বহ্নি, নেশা আর সাম্প্রিদায়িকতার যুপকাষ্ঠে বলি হয়ে গেল
অপার সম্ভাবনাময় এক তরুনী, ‘মুক্তি বর্মন’।
বিকশিত হওয়ার আগেই বোঁটা ছিড়ে দেওয়া হল, অকালে বৃন্তচ্যুত হ’ল একটি কোমল রঙিন ফুল।
ইতরের লালসা, কামান্ধতা, পাশবিকতা থেকে ‘মুক্তি’ পেয়ে ‘মুক্তি বর্মন’ এখন সুদূর নীলিমার নক্ষত্রলোকে। ধংস হয়ে গেল একটি পরিবারের মান সম্মান, স্বপ্ন ও নিরাপত্তা। লাভ জ্বিহাদ, অপহরন, আগেও ঘটেছে কত। বিচার হওয়ার কথা শুনিনি কখনো।
হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান বলে কথা নয়।
সব মেয়েরা রাস্তায় উত্যক্ত, লাঞ্চনা, ধর্ষনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সব কন্যার পিতা সংখ্যা লঘু, পুত্রের ও পিতা বটে। সম্মানের কাছে অসহায়। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বেপরোয়া ছেলেকে শাসন করুন।
বিচারহীনতার কদর্য ফসলের ফলন হায়
বেড়ে চলেছে, বাড়তে থাকবে। মুখ বুজে বসে রইলো সমাজ, মানবতা নিক্ষিপ্ত হলো দূর্গন্ধের কুয়ায়। দানবেরা দাপিয়ে বেড়ায় দাপটে।
কার ঘরে কবে আঁধার ঘনাবে জানি না
বিচারও কাঁদিবে ভবিষ্যতে নির্জন নিরালায়।
অনিল চন্দ্র দত্তের ফেসবুক
থেকে সংগৃহিত