সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিন দু’পক্ষের আইনজীবীদের মাঝে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় রবিবার (২ এপ্রিল) ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। এদিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ, তাদেরকে দায়িত্বগ্রহণে বাধা দিতে বিএনপির ‘ডিম হামলা’ ও তলবি সভায় গঠিত অ্যাডহক কমিটির দায়িত্ব বুঝে না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলনের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নিরঙ্কুশ জয় পায় সরকার-সমর্থিত আইনজীবীদের প্যানেল। তবে নির্বাচনে দুপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নির্ধারণ না হওয়ায় পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তারা। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নতুন করে অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন চেয়ে একটি অ্যাডহক কমিটিও গঠন করেন কিছুসংখ্যক আইনজীবী। নিয়ম অনুসারে নতুন অ্যাডহক কমিটি রবিবার (২ এপ্রিল) বারের দায়িত্বভার নেওয়ার চেষ্টা করে। অপরদিকে বিজয়ী প্রার্থীরা একই দিনে দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য পূর্ব থেকে জানান দিয়ে রাখে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রবিবার (২ এপ্রিল) দুপুর ১টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীদের গায়ে ডিম নিক্ষেপ করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সরকার-সমর্থক শতাধিক আইনজীবী এদিন দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। তারা সমিতি ভবনে এবং নিচতলায় অডিটোরিয়ামের সামনে বিক্ষোভ করেন। অপর দিকে বিএনপি-সমর্থক আইনজীবীরাও সমিতি ভবনের নিচ তলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে কয়েকশ’ আইনজীবী বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে সরকার সমর্থক শতাধিক আইনজীবী পাল্টা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে আদালত অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান চলে।
আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামের সামনে নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি মতবিনিময় করার কথা থাকলেও তা তারা করতে পারেননি। পরে দুপুর ৩টার সময় কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহসিন রশিদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘দুপুর ২টায় আইনজীবীদের সঙ্গে অডিটোরিয়ামে আমাদের মতবিনিময় করার কথা ছিল। কিন্তু তারা চর দখলের মতো চারদিকে (অডিটরিয়ামের) তালা মেরে রেখেছে। তালা মারা থাকায় আমরা অডিটোরিয়ামের সামনেই মতবিনিময় করছি। আমরা বেলা ১১টায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছি। ওনাকে আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, এই অনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে আপনি কোনও সম্পর্ক রাখবেন না। সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে কোনোভাবেই তাদের আপনি গ্রহণ করবেন না। আমরা সুপ্রিম কোর্ট বারের অফিসকেও জানিয়ে দিয়েছি। শুধু আমাদের আদেশই মানবেন। অন্যকোনও আদেশ চলবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি— আমার নেতৃত্বে গঠিত সমিতির অ্যাডহক কমিটিই সম্পূর্ণ বৈধ। তারা সমিতির মর্যাদা নষ্ট করেছে। এসময় অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, কমিটির সিনিয়র সদস্য আলহাজ গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকশ’ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুসারে এদিন বিকাল ৪টার সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত ১৪ সদস্য দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৫ ও ১৬ মার্চ হট্টগোল, হামলা, ভাঙচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৪টি পদের সবকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়। সুত্র: বিট্রি