কুমিল্লার চান্দিনায় চুরির অভিযোগে যুবক পিটিয়ে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের মা মিলি বেগম এর দায়ের করা মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করে চান্দিনা থানা পুলিশ।
তদন্তের মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মূল হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দিনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি জানান, দোকানে চুরির ঘটনা যেমন সঠিক তেমনি কতিপয় ব্যক্তির নির্মম প্রহারে যুবক মোজাম্মেল হক সুমনকে হত্যার বিষয়টিও পরিস্কার।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার পর আমরা ওই দোকানের সিসি টিভির সরঞ্জাম জব্দ করেছি। ওই সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাতে দোকানের টিনের চালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে মোজাম্মেল হক সুমন। কিছুক্ষণ পর ৮-১০জন ব্যক্তি এসে তাকে হাতে-নাতে আটক করে। এক পর্যায়ে তারা চুরির জন্য অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক সুমন এর হাত পিছনে বেঁধে নির্মম ভাবে প্রহার করে হত্যা করে। পরে বিষয়টিকে গণপিটুনি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এলাকাবাসী। এ হত্যা কান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, রবিবার (৮ জানুয়ারী) ভোরে চুরির অভিযোগে যুবক মোজাম্মেল হক সুমন (২৩)কে হত্যার ঘটনায় ওইদিন বিকেলেই নিহতের মা বাদী হয়ে অজ্ঞত ব্যক্তিদের আসামী করে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, আমার ছেলেকে চোর সন্দেহে কয়েকজন লোক হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড ও লাঠি-সোটা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে।
নিহতের মা গার্মেন্টস কর্মী মিলি বেগম জানান- আমি স্বামী পরিত্যাক্তা। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সুমন বড়। স্বামীর বাড়িতে স্থান না হওয়ায় বাবার বাড়ি বাড়েরা ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে থেকে স্থানীয় ‘ডেনিম’ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করি। আমার ছেলেটি চট্টগ্রামে থাকতো। মাঝে মাঝে বাড়িতে এসে ২/১ দিন থাকতো।
তিনি কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন, ‘আমার পোলায় যদি চুরি করে থাকতো তাইলে তারা হাত-পা ভাইঙ্গা লুলা কইরাও যদি রাখতো তাও আমি আমার পোলার মুখে মা ডাক হুনতাম’।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. সাহাবুদ্দীন খাঁন জানান, আইন হাতে তোলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। আমাদের তদন্তে ছেলেটিকে আটক করে নির্মম ভাবে পিটানোর কারণেই তার মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অধিকতর তদন্ত করে আমরা যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রসঙ্গত, শনিবার (৭ জানুয়ারী) দিবাগত রাত পৌঁনে ৩টায় সাতবাড়িয়া গ্রামের দোতলা মসজিদ সংলগ্ন মো. সাইদুর রহমান এর মুদি দোকানে টিনের চালা খুলে চোর ঢুকে। এসময় পার্শ্ববর্তী বাড়ির রফিক নামের একজন টের পেয়ে দোকানি সাঈদকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক এসে ধাওয়া করে দোকানের ভিতর থেকে মোজাম্মেল হোসেন সুমনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। মারাত্মক আহতাবস্থায় তাকে সকালে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।