রাত্রিকালীন মোবাইল ডিউটি। মফস্বলের সুনসান নীরব কোন এক থানা। শেষ রাতে ওসি সাহেব ফোন দিলেন। ওমুক জায়গায় যেতে হবে। গাড়ী অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। দ্রুত ওখানে গিয়ে জানান ঘটনাটা কি? তেলের টাংকি খালি থাকা বেসরকারি গাড়ীর স্টার্ট ওঠে ঠক ঠক করে। ডিউটি সাব ইন্সপেক্টর সঙ্গীয় তিনজন পুলিশ সদস্য সহ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন চাকায় পিষ্ট হওয়া লন্ডভন্ড শরীরের টুকরো ছিটিয়ে আছে একশো গজ রাস্তা জুড়ে। ওসি সাহেব ঘটনা শুনে বললেন- আইনগত ব্যবস্থা নাও। জনমানবহীন ঘুটঘুটে অন্ধকারে চলে সুরতহাল নির্মানের কাজ। এখানে কেউ নেই। কেউ বলে না, কলিজাটা শক্ত করে রাখ, কাজ শেষ অব্দি। লাশের প্রতিটি টুকরো একত্রে এনে ব্যাগ ভর্তি করার পরে দু একজনের দেখা মেলে দূর থেকে। হয় নির্বাক দর্শক। অথবা নিখুঁত ভিডিও কারিগর।
চাকুরী জীবনে আগুনে পোড়া লাশ, পানিতে ভাসা লাশ, পঁচে যাওয়া লাশ, ঝুলে থাকা লাশ, বিষে নীল হওয়া লাশ, খন্ড বিখন্ড লাশ, চোখ বের হয়ে আসা লাশ ইত্যকার বহুবিধ লাশের সাথে সংসার স্থাপন করতে হয়েছে। সাথে থাকা হতভাগ্য কনস্টেবল ছাড়া এতটুকু আন্তরিকতা নিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না তেমন কেউ। এমনকি সাক্ষী হিসেবে সুরতহালে স্বাক্ষর করতেও অনেকে ঘৃণা করে। এরপরেও লাশের সহিত পুলিশের ভালোবাসা কমে না। মানুষের ভালোবাসা যেখানে শেষ, সম্ভবত পুলিশের ভালোবাসা সেখান থেকে শুরু।
দুই হাজার উনিশ সালের কোন এক সকালে ডিউটির সময় সংবাদ পাই বাঁকখালী নদীতে এক কিশোরের লাশ ভাসছে। একঘন্টা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থেকে লাশ টেনে আনার মতো একজন লোক পেলাম না। অথচ দুই তীরে শ পাঁচেক লোক। এদিকে লাশের মুখে কাঁকড়া হাঁটতে দেখে বিচলিত হয়ে নিজের জুতো মোজা খুলে নিজেই নেমে গেলাম পানিতে। একরকম ঘটনা অসংখ্য।
আজকে যারা যা ইচ্ছা বলছেন, একবার উপরের ও-ই স্থানে নিজেকে চিন্তা করলে মনে হয় একটু হলেও আপনাকে নতুন করে ভাবতে হবে। আপনি যখন ঘুমান, আপনি যখন বেড়াতে বের হন, আপনি যখন ঈদের নামাজ পড়েন, আপনি যখন পুজোর আনন্দে হারিয়ে যান – তখন আপনার মতোই কিছু লোক দাঁড়িয়ে থেকে আপনাকে নিরাপত্তা দেয়। সেই মানুষটিরও মনে ইচ্ছা জাগে জামাতে নামাজ আদায়ের কিংবা ছুটির দিনে বৌ বাচ্চা নিয়ে মন খুলে ঘুরার।
প্লিজ, আমরা যারা আপনাকে নিয়ে ভাবি। আপনার নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করি, তাদের আর কষ্ট দিবেন না। নাউন পুলিশ আর এডজেক্টিভ পুলিশকে একসাথে মিশাবেন না। আমরা যারা বেশিদের দলে, যারা সানন্দে আপনাদের সেবা দিতে শপথ করেছি। আমাদের পাশে থাকুন। সহযোগিতা করুন।
সঞ্জিত চন্দ্র নাথস হকারি পুলিশ পরিদর্শক এর ফেইস বুক থেকে নেওয়া!