কক্সবাজারে উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এল-১৪ ব্লকের মাঝি (নেতা) আজিমুদ্দীন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ক্যাম্প জুড়ে নীরব নিস্তব্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মনে ভয় এবং ভবিষ্যতে আরও বড় অঘটনের শঙ্কা কাজ করছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাতের ঘটনার পর শুক্রবার (১০ জুন) সকাল থেকে অনেক রোহিঙ্গা ঘর থেকে বের হননি। যারা বের হয়েছেন তারাও আত্মরক্ষার্থে বাঁশের লাঠি, তীর হাতে রেখেছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার আজিমুদ্দীনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
উখিয়ার ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
এদিকে গতবছর অক্টোবর মাসে সংঘটিত ক্যাম্পের এইচ-৫২ ব্লকের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ৬ রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনাস্থল থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরত্বে রোহিঙ্গা নেতা আজিমুদ্দীনকে হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গা এবং নিহত আজিমুদ্দীনের পরিবারের দাবি, সিক্স মার্ডারের ঘটনায় জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আজিমুদ্দীনকে হামলার সময় ঘটনাস্থলের কিছু দূরত্বে থাকা রোহিঙ্গা যুবক মো. হামিদ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টার দিকে সন্ত্রাসীদের দুটি আলাদা গ্রুপ দুই দিক থেকে বিভক্ত হয়ে বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পে ঢুকে। তাদের প্রত্যেকের হাতে দা, কিরিচ ছিল। তারা প্রথমে ক্যাম্পের এল-১৪ ব্লকে মাঝি আজিমুদ্দীনকে পেয়ে এলোপাতাড়ি সঙ্গে থাকা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।’
ঘটনায় কারা জড়িত :
বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবি, রোহিঙ্গাদের স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ক্যাম্পটিতে তাদের প্রধান আস্তানা গড়তে চেয়েছিল। তাদের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা পেয়ে গতবছর ক্যাম্পের এইচ-৫২ ব্লকের একটি মাদ্রাসায় রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে গুলি করে ছয় রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। একই ক্যাম্পে আরসা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বাধা হিসেবে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) ও সাধারণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছে। বিভিন্ন সময়ে অপরিচিত ফোন নম্বর বা উড়ো খবরে ওই রোহিঙ্গাদের কাছে হত্যার হুমকি পাঠানো হয়। নিহত আজিমুদ্দীনকেও গত তিন দিন আগে হত্যার হুমকি দিয়েছিল আরসা। বিষয়টি আজিমুদ্দীন তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন। আরসার নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতাসহ আরও ডজন খানেক রোহিঙ্গাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় হামলাকারীদের একটি গ্রুপে আরসা সদস্য আব্দু শুক্কুর, লালু, জাবের, মুসা ও খালেকসহ বেশ কয়েকজনকে দেখেছে এল-১৪ ব্লকের প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা যুবকরা। তাই হত্যাকণ্ডের জন্য ১৮ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা এবং আজিমুদ্দীনের পরিবার আরসাকেই দায়ী করছেন।
যে কারণে এ ঘটনা:
ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মতে, ‘এটি শেষ নয়, ভবিষ্যতে ক্যাম্পে আরসাবিরোধীদের ওপর আরও হামলা আসবে। তাদের বিরুদ্ধাচারণ যারা করছে তাদের টার্গেট করে হত্যা করা হবে। যেন অন্য সাধারণ রোহিঙ্গারা তাদের বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পায়।’
গত একমাস আগে আরসা একই ক্যাম্পের এল-১৭ ব্লকের মাঝি (নেতা) সানা উল্লাহ ও এম-৯ ব্লকের সোনা আলীকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর ভলান্টিয়ারদের মধ্য ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।