শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলায় সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে তার ১৫ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ। এই মামলায় মুসাসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে গ্রেফতার হওয়া ১২ আসামিকে পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে এনে মুসার মুখোমুখি করবে ডিবি পুলিশ।
শুক্রবার (১০ জুন) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তার দেওয়া জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসাকে উল্লেখ করেছে। তারপর থেকেই মুসাকে আমরা খুঁজছিলাম। টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে ঘটনার আগেই মুসা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমরা তদন্তের এক পর্যায়ে জানতে পারি মুসা ওমানে অবস্থান করছে। তখন আমরা ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্ক ওমানে ইন্টারপোল ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওমান পুলিশ মুসাকে আটক করার পর সেখানকার পুলিশ আমাদের এসকর্ট পাঠিয়ে নিয়ে আসার জন্য বলে। ডিবি মতিঝিল বিভাগে দুজন এডিসি ও পুলিশ সদর দফতরে ইন্টারপোল ডেস্কের একজন সহকারী কমিশনারকে ওমান পাঠানো হয়। তারা গতকাল (বৃহস্পতিবার) মুসাকে নিয়ে দেশে ফেরেন।
তিনি বলেন, আমরা মুসাকে ১৫ দিনের রিমান্ড চাইব। আগে গ্রেফতার আসামিদেরকেও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেফতার আসামিদের দেওয়া তথ্য ও মুসার কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে আসামিদের মুখোমুখি করা হবে।
টিপু হত্যায় মুসাকে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী বলে দাবি করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু নিহত টিপুর স্ত্রী বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, মুসা প্রধান পরিকল্পনাকরী হতে পারে না। এর পেছনে অন্য কারো হাত রয়েছে।
বিষয়ে ডিবি প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাফিজ আক্তার বলেন, মুসাকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তখন অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে।
ওই ঘটনায় শুটারকে বহনকারী মোল্লা শামীম দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা সব তথ্য যাচাই করছি। তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুর থানাধীন আমতলা এলাকা হতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু তার ড্রাইভার মনির হোসেন মুন্না এবং দুই বন্ধু মিরাজ ও আবুল কালাম এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার সংলগ্ন গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট হতে মাইক্রোবাসযোগে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে টিপু ও তার ড্রাইভার এবং রিকশারোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নামক মেয়েকে গুরুতর জখম করে। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু ও রিকশারোহী প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় শাহজাহনপুর থানায় একটি মামলা রুজু হয়।
গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ঘটনার মূল শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে (৩৪) গত ২৭ মার্চ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন সিকদার মুসার সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাকে গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ।
জানা যায়, সুমন সিকদার মুসা ১২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়েন। এরপর তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত না হতে পেরে গত ৬ এপ্রিল পুলিশের এনসিবি শাখা মুসাকে গ্রেফতারের ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়। ৮ এপ্রিল প্রতিবেশী দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের মাধ্যমে পত্র পাঠায়। পরে জানা যায়, সুমন সিকদার মুসা গত ৮ মে দুবাই থেকে ওমান প্রবেশ করে। তখন ইন্টারপোলের ওমান পুলিশ এনসিবি’র সহযোগিতায় তাকে ১২ মে গ্রেফতার করে। গত ৯ জুন তাকে ওমান থেকে দেশ ফিরিয়ে আনা হয়।
এই মামলায় মোট ১৩ জন আসামি গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী সুমন সিকদার মুসা এবং শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ অন্যতম।
হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সহযোগী অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানায় পুলিশ।
গ্রেফতার সুমন সিকদার মুসার নামে ঢাকা মহানগরের পল্লবী, মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলাসহ ১২/১৩টি মামলা রয়েছে।