চট্টগ্রামের আকাশে এখন শুধুই কান্নার রোল। বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ। স্বজনদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে নগরীর চারপাশ। শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরই কেঁপে ওঠে আশপাশের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা। বিভিন্ন বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে পড়তে থাকে। আগুনের তাপে কেমিক্যালভর্তি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়ে স্প্লিন্টারের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে নগরবাসী এ কম্পনকে ভূমিকম্প মনে করলেও পরক্ষণেই তারা ডিপোতে বিস্ফোরণে ভয়াবহতার আঁচ পায়।
শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ১১টার দিকে লাগা আগুন রোববার (৫ জুন) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি কাজ করছে রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
স্মরণকালের ভয়াবহ এ বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৯ জন নিহতের তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী। এর মধ্যে আটজন ফায়ার সার্ভিসকর্মী। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডে আহত চার শতাধিক মানুষের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
এদিকে রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হতাহতদের স্বজনদের ভিড় বাড়ে। দুপুর নাগাদ হাসপাতাল এলাকায় উৎসুক মানুষও ভিড় করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেকে সেখানকার পরিস্থিতি ভিডিও ধারণ করছেন, কেউ কেউ তুলছেন সেলফি। সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ সদস্য, বিএনসিসি, স্কাউটসহ অন্যান্য সেচ্ছাসেবী দলগুলো।
বারবারই স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো ও চমেকের ইমার্জেন্সি কাউন্টারের মাইকে সাধারণ মানুষকে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে সেদিকে খুব একটা নজর দেখা যায়নি উৎসুক জনতার। দিনভর হতাহতদের স্বজন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি যানবাহনের জটলাও দেখা যায় হাসপাতাল এলাকায়।
শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুন লাগে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে বিকেলে ঢাকায় আনা হয়েছে।