চলনবিলে তখন গভীর রাত। চারদিকে সাঁ সাঁ শব্দ। বড় বড় পানির ঢেউ। কোথাও কোনো বাড়িঘর নেই। নেই কোনো আলো। জীবন ঝুঁকির মুখে। আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম এ বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারবো না। জীবন বাঁচাতে ৯৯৯ নম্বরে কল দেই। পরে নাটোর জেলা পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের উদ্ধার করে।’
কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের সিংড়ার চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় দলবেঁধে নৌকা ভ্রমণে গিয়ে গভীর রাতে পথ হারানো আত্রাই উপজেলার বলরামচক গ্রামের অমৃত সরকারের ছেলে পিয়াস সরকার। তাদের দলে নারী ও শিশুসহ ৪০ জন মানুষ ছিল।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, ৯৯৯ নম্বর থেকে কল পেয়ে নাটোর জেলা পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলনবিলে পথ হারানো মানুষদের রাতভর অভিযান চালিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্র নগর এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
তিনি জানান, নওগাঁর আত্রাই উপজেলা থেকে বুধবার (২৬ আগস্ট) নৌকাযোগে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ ও নাটোরের গুরুদাসপুরের বিলসা বিল ভ্রমণে আসেন পাঁচজন শিশু ও ১২ জন নারীসহ ৪০ জনের একটি দল। বিলশা বিল বেড়ানো শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের তিশিখালী মাজারে আসেন তারা। সেখান থেকে রাত ১০টার দিকে আত্রাইয়ের পথে রওনা হওয়ার তিন ঘণ্টা পর দলটি বুঝতে পারে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে।
এ সময় তারা রাতের ঘন অন্ধকারে কোনোভাবেই নিজেদের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারছিল না। চলনবিলের ভয়ানক অবস্থা দেখে তারা জীবন বাঁচানোর চিন্তায় পড়ে যায়। এ সময় পিয়াস সরকার নামে ওই দলের একজন জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পথ হারিয়ে ৪০ জনের জীবন সঙ্কটাপন্ন জানিয়ে সাহায্য চায়।
পরে ৯৯৯ নম্বর থেকে সিংড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি অবহিত করলে তিনি পুলিশ সুপার লিটন কুমারকে জানান। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সিংড়া ও গুরুদাসপুর থানা পুলিশের পাঁচটি টিম ৪০ জনের ওই দলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে।
আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে সিংড়ার বিলদহর এবং পরে গুরুদাসপুরের যোগেন্দ্রনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পথ হারানো ৪০ জনের দলকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়ে আত্রাইয়ের সীমানা পর্যন্ত রেখে আসে পুলিশ।