নানা পন্থায় পাঁচ শতাধিক অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
আজ মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল ২০২২) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর এর যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)।
তিনি জানান, “সোমবার (১৮ এপ্রিল ২০২২) ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রাইভার মোঃ হিরু মোল্লা, দিন মজুর মোঃ নিজাম উদ্দিন, ড্রাইভার মোঃ জাকির হোসেন ও দোকানদার মোঃ নজরুল ইসলাম এবং নরসিংদীর শিবপুর থেকে চক্রের মূল হোতা আব্দুল বারেককে গ্রেফতার করে ডিবি সাইবারের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম”।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ২টি খেলনা পিস্তল, ২টি ছুরি, ১টি চাপাতি, ১টি লোহার পাইপ, ১টি প্লাস ও ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কীভাবে এ অপরাধ সংঘটিত হয়, এ প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “গ্রেফতারকৃতরা অপরাধ সংঘটনের পূর্বে ঢাকা মহানগরীর জনসমাগম স্থান বা আশপাশ এলাকায় প্রাইভেটকারে ১/২টি সিট খালি রেখে অবস্থান নেয়। টার্গেট অফিসগামী যাত্রী। যে সকল যাত্রী গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য পরিবহনে উঠতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে ডেকে যাত্রীর গন্তব্যস্থলের দিকে যাবে বলে গাড়িতে ওঠায়। যে সকল যাত্রী আসামীদের ফাঁদে পড়ে সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠে তাদেরকে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে নিয়ে খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে”।
এছাড়াও তারা নগদ টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, “গ্রেফতারকৃতরা এ পর্যন্ত ৫০০ এর বেশি অপহরণ করেছে বলে স্বীকার করেছে। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আব্দুল বারেকের নামে ৬টি ও গ্রেফতারকৃত বাকীদের নামে পৃথক পৃথক ২টি করে মামলা রয়েছে”।
ব্রিফিংকালে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বলেন, “২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে যাত্রাবাড়ীর বাদশা মিয়া রোডের মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে এক ব্যক্তি অপহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক পিটিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা করে ৫ লক্ষ টাকার জন্য তার বাসায় ফোন করতে বলে। এ অবস্থায় তার স্ত্রী প্রথমে বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে তাদের নির্যাতনে আরো ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। অপহরণকারীরা ভিকটিমের নিকট থেকে সর্বমোট ১ লক্ষ টাকাসহ ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন এবং পকেটে থাকা ১৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। বিকাল আনুমানিক চারটায় তাকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার বাউশিয়া নামক একটি নির্জন স্থানে ফেলে যায়”।
তিনি বলেন, “ভিকটিম অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরবর্তী সময়ে তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অপহরণ মামলা রুজু হয়। থানা পুলিশের তদন্তের পর তদন্তভার পরবর্তীতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগকে দেয়া হয়। অত্র বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম দীর্ঘদিন তদন্ত করে তথ্য প্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় চক্রটিকে শনাক্ত করে। পরবর্তী সময়ে সোমবার (১৮ এপ্রিল ২০২২) ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এ চক্রের চার জন ও নরসিংদীর শিবপুর থেকে চক্রের মূল হোতা আব্দুল বারেককে গ্রেফতার করে সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম”।
এ ধরণের অপরাধ থেকে বাঁচতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন “অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস কিংবা সিএনজিতে একসাথে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়িতে ভ্রমণের পূর্বে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর নোট রাখতে হবে। যেসব গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট বিদ্যমান নেই সেসব গাড়ি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে”।
রাইড শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যাপসভিত্তিক স্বনামধন্য কোম্পানির সেবা গ্রহণ করতে হবে অথবা হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব ব্যবহার করতে হবে। যে সব স্থানে অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা বিদ্যমান নেই সেসব স্থানে গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, লেগুনা ইত্যাদি সেবা গ্রহণ করতে পরামর্শ দেন ডিবি কর্মকর্তা।
যাত্রাবাড়ী থানায় রুজুকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান ডিবির এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম এর নিদের্শনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার, পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে সাইবার সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম পিপিএম এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।