কুমিল্লা মহানগরীর চকবাজার (গর্জনখোলা) এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় একটি বিদেশী পিস্তলসহ সহিদুর রহমান সজিব (৩২) নামের এক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামি শহিদুর রহমান সজিব মৌলভীপাড়া এলাকার মৃত ফরিদ উদ্দিনের ছেলে।
বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, সোমবার (১৪ মার্চ) দিন দুপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার একটি ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুৃহুৃর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক কায়সার হামিদ জানান,প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়া গর্জনখোলার বিএনপি ক্যাডার আবদুর রাজ্জাক ও সজিবকে ভিডিও দেখে সনাক্ত করা হয়। তিনি জানান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম স্যারের নির্দেশে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মফিজুল ইসলাম রোববার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে গর্জনখোলা রাজ্জাক মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে একটি বিদেশী পিস্তলসহ সজিব নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান,জুয়ারবোর্ডের টাকার ভাগাভাগি, মাদক ব্যবসা,বাস স্টেশন দখল ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নগরীর গর্জনখোলাস্থ পশ্চিম পাড়া এলাকার মালু মিয়ার ছেলে বিএনপি কর্মী ও কথিত সোর্স আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জনের একটি গ্রুফ দেশীয় অস্ত্র দা ছেনি ও পিস্তল নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী রবিন ও জালাল উদ্দিনসহ তার পক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়জন আহত হয়।
এ সময় উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, পিস্তল, রাম-দা, চাপাতি, রড, হাতুড়ি, লাঠি নিয়ে চকবাজার সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর হামলা চালায় রাজ্জাক বাহিনী। এ সময় রাজ্জাক ও তার বাহিনীর সদস্য সজিবের হাতে পিস্তল দেখা যায়।
সংঘর্ষের বিষয়ে গর্জনখোলার মৃত মাহে আলমের পুত্র রবিন বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে জুয়ার বোর্ড ও বাস স্টান্ডে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় রোববার দুপুর ২টার দিকে আবদুর রাজ্জাক অর্ধশত সন্ত্রাসী নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। হামলার সময় রাজ্জাক ও সজিবের হাতে ছিল বিদেশী পিস্তল যা সবাই ভিডিও ফুটেজে দেখতে পেয়েছে দেশবাশী । এছাড়া বাকি সকল সন্ত্রাসীদের হাতে ছিল দেশীয় রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র। তারা আমিসহ ৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে। একজনকে কুপিয়েছে। এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান কুপিয়ে মালামাল লুটপাট করেছে।
যুবলীগ কর্মী রবিন আরো বলেন, আবদুর রাজ্জাক একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ দাবি করে আরও বলেন, সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। এলাকার সবাই রাজ্জাকের কথায় চলবে ও চলতে হবে। রাজ্জাক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না। কিন্তু আমি আর জালাল তার এসব কর্মকান্ডের বিরোধিতা করেছি বলে সে আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও রাজ্জাকের লোকজন হামলা চালিয়ে তার পায়ে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বলে জানায় রবিন। এ বিষয়ে রাজ্জাক মিয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক কায়সার হামিদ বলেন,সংঘর্ষের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ আমাদের হাতে এলে সেটি পর্যালোচনা করে রাতেই একটি পিস্তলসহ সজিব নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে এসআই মফিজুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।
প্রকাশ্যে সংঘর্ষ ও অস্ত্রের মহড়ার বিষয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজে সনাক্ত হওয়া অস্ত্রসহ সজিব নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ওই ঘটনায় প্রকাশ্যে যারা অস্ত্র প্রদর্শন করেছে তাদের সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন: