সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ ফুসফুস জটিলতায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন গত বছরের ১৪ আগস্ট। প্রায় আড়াই মাস চিকিৎসাধীন থাকাকালে কিছুদিন ছিলেন আইসিইউতেও। পরে গত বছরের ৫ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গত তিন মাস সেখানে চিকিৎসাধীন ৭৮ বয়সী এই রাজনীতিবিদ।
জাতীয় পার্টির রওশন অনুসারী নেতা-কর্মীরা বলছেন, পার্টির পক্ষ থেকে সঠিকভাবে তার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে না।
আর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেগম রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেন না। ফোন করলেও রিসিভ করেন না।
এদিকে, এইচ এম এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ব্যাংককে অবস্থানরত সাদ এরশাদের সঙ্গে তিনি প্রায়ই যোগাযোগ করেন। সাদের বরাতে কাজী মামুন বলেন, রওশন এরশাদ আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন।
তিনি বলেন, একজন মানুষ টানা প্রায় ছয় মাস হাসপাতালে থাকলে তার অবস্থা কেমন হতে পারে তা সবাই অনুমান করতে পারেন। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে যদি বেগম রওশন এরশাদের খোঁজখবর না নিয়ে থাকে তাহলে তা দুঃখজনক। কাজী মামুন বেগম রওশন এরশাদের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
জানা গেছে, রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। দিন দিন তার শরীরে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এই জন্য অধিকাংশ সময় তাকে আইসিইউতে থাকতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আইসিইউ থেকে কেবিনে হস্তান্তর করা হলেও এক-দুই দিনের বিরতিতে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। তখন আবার তাকে আইসিইউতে নিতে হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির রওশন অনুসারী নেতা-কর্মী বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে দলটি নিয়মিত ব্রিফিং করলেও রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে শীর্ষ নেতারা অনেকটাই উদাসীন। আলাদা করে দোয়া মাহফিল দূরে থাক করোনায় আক্রান্ত পার্টির শীর্ষ নেতাদের জন্য অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলেও রওশন এরশাদের জন্য কিছু বলা হয় না। ব্যানারে থাকে না রওশন এরশাদের ছবিটি।
তারা বলেন, পার্টির দুর্দিনে রওশন এরশাদের ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রয়াত এরশাদ যখন অন্তরিন ছিলেন তখন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ছিল। ভাঙন ধরেনি দলে। ১৯৯১ এবং ’৯৬ সালের নির্বাচনেও আমরা ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। উনি দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, রওশন এরশাদকে আমাদের যে মূল্যায়ন করা উচিত ছিল তা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা কেউ তার খোঁজ জানি না বা পার্টির কেউ খোঁজ রাখার চেষ্টাও করে না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এই বিষয়ে জানান, রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা আমরা সবসময়ই করছি। বড় সমস্যা ব্যাংককে অবস্থানরত সাদ এরশাদ আমাদের কিছুই জানান না। আবার ফোন দিলেও রিসিভ করেন না। বিষয়টা নিয়ে সমস্যায় আছি।
তিনি জানান, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং শেরিফা কাদেরের করোনা ভাইরাসমুক্ত হওয়ার জন্য অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নয়। এই বিষয়ে কথা বলতে সাদ এরশাদের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ফুসফুসের জটিলতা, ব্লাড প্রেসার, বার্ধক্যজনিতসহ নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি ময়মনসিংহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি সংসদে গত দুই মেয়াদে বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।