পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান হোসনে আরা বেগম। মরদেহ গোসলের প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে হোসনে আরা মারা যাওয়ার ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। তখনই শোকাচ্ছন্ন ওই বাড়িতে নেমে আসে আরেকটি শোকের ছায়া। স্ত্রী বিচ্ছেদের শোকে মারা যান তার স্বামী জব্বার মিয়া।
শুক্রবার (৪ মার্চ) মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের দেব মাস্টারপাড়া এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মরণব্যাধি ক্যানসারে ভুগছিলেন হোসেনে আরা বেগম (৫৫)। শেষ পর্যন্ত ক্যানসারের কাছে হার মানেন। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হোসনে আরা।
সকাল ১০টার দিকে জানাজার সময় নির্ধারণ করে সকাল থেকে শুরু হয় হোসনে আরা বেগমের দাফন প্রক্রিয়া। বাড়ির পাশেই বেলছড়ি কেন্দ্রীয় কবরস্থানে কবরও প্রস্তুত করার কাজ চলছিল। বাড়িতে চলছিল মরদেহকে গোসল করানোর কার্যক্রম।
ঠিক এই মুহূর্তে মারা যান হোসনে আরার স্বামী জব্বার মিয়া (৭০)। স্ত্রী মারা যাওয়ার ১৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এমনই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
বেলছড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আল-আমিন বলেন, ‘এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি। জব্বার মিয়া-হোসনে আরা দম্পতির মৃত্যু বেলছড়ির মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে।
তিনি জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোসনে আরা বেগমকে এবং জুমার নামাজের পর জব্বার মিয়াকে বেলছড়ি কেন্দ্রীয় কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।
জব্বার মিয়া-হোসনে আরা দম্পতির একমাত্র মেয়ে লিপি আক্তারের স্বামী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার শাশুড়ি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্তের কথা শুনে আমার শ্বশুরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে তিনি স্ট্রোক করেন। এজন্য চিকিৎসাও করানো হয়। আবারও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আমাদের সেই সুযোগটুকু দিলেন না। একইদিনে শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক বড় শূন্যতার সৃষ্টি করলো।
এ ঘটনাকে জব্বার মিয়া ও জব্বার মিয়ার গভীর প্রেমের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বেলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রহমত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকাকালীন তাদের দুজনের মধ্যকার প্রেম-ভালোবাসার গভীর সম্পর্ক ছিল। মৃত্যুও তাদের আলাদা করতে পারেনি। পাশাপাশি কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তারা।