গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে তার বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছে। এছাড়াও তার অপরাধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকশ দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী নগরীর ছয়দানার মেয়রের বাসভবনে সামনে জড়ো হতে থাকেন। মেয়রের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। দুপুর ১টার দিকে মেয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে ভবনের নিচতলায় নেমে আসেন।
এ সময় নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়রও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ছোট ভাই ও মা জাহাঙ্গীর আলমকে সান্ত্বনা দিয়ে বাসার ওপর নিয়ে যান। সাংবাদিকদের অনুরোধে আবার বাসার নিচে নেমে এসে তার বহিষ্কার সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মেয়র বলেন, গাজীপুর মহানগরীতে আওয়ামী লীগকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছি। গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করেছি। ২০১৩ সালের পর থেকে কিছু লোক আমাকে মারতে ও বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আমার পেছনে সব সময় লেগেছিল। যারা ঘরের ভেতরে এসে অডিও রেকর্ড করতে পারে তারা মানুষকে হত্যাও করতে পারে। আমার অস্তিত্ব ও প্রাণের মধ্যে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমার অভিভাবক হিসেবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমি মাথা পেতে নেবো। তিনি যদি আমাকে বিনা দোষে কিংবা বিনা কারণে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে বলেন আমি তা করতে রাজি আছি।
মেয়র আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভুল ও আংশিক তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছিলাম আমার কথা বলার জন্য। করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে যদি আমার কথাগুলো বলতে পারতাম তাহলে তিনি সঠিক তথ্য জানতেন। উনার কাছে সঠিক তথ্য গেলে আমি সত্য ও ন্যায়বিচার অবশ্যই পেতাম।
আমার ভুল হতে পারে, আমি কোনো পাপ ও অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে তিন বছরের জন্য পদ দেওয়া হয়েছে। আমাকে বহিষ্কার করে আমার, আমার পরিবারের এবং আমার অস্তিত্বের মধ্যে আঘাত হানা হয়েছে। সেটা আমি মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছি না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন এই গাজীপুরবাসীর জন্য এবং আমার জন্য আমার ভুল ক্ষমা চাই। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাকে পুনরায় বিবেচনা করেন।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগ যেন বিবেচনা করে। আমাকে পদ দেওয়া হোক আর না হোক আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে থাকতে চাই। আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। অনেকে না বুঝে হয়তো আমার নামে সমালোচনা করতে পারে।
আমার অস্তিত্বে প্রধানমন্ত্রী একটি আদর্শের জায়গা, মায়ের স্থান। তিনি যেন আমার বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনা করেন এবং শহর গড়ার জন্য যেন আমাকে সহযোগিতা করেন।
তিনি বলেন, আমাকে যদি মনে হয় গ্রেফতার করবেন বঙ্গবন্ধুর জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য যদি আমার জীবন দিতে হয় আমাকে বলবেন আমি আত্মসমর্পণ করবো। আমার পক্ষ থেকে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করবো না। আমাকে ফাঁসি দেওয়া হোক। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু মিথ্যা অপবাদ যেন না দেওয়া হয়। আমার মা আছে, সন্তান আছে, আমার আওয়ামী লীগ আছে, আমার সমর্থিত লোকজন আছে, শহর আছে। আমার শহরের মানুষ যেন কোনোভাবে অপবিত্র না হতে পারে এ জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চাইছি।
গাজীপুরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটিতে কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। আমি প্রথম নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ৩২ হাজার বাড়িঘর, দোকানপাট, কবরস্থান, মসজিদ ভেঙে মানুষ রাস্তার জন্য জমি দিয়েছে এবং আট হাজার বিঘা জমি আমি স্থানীয় মানুষের কাছে চেয়ে নিয়ে এলাকায় রাস্তা-ঘাট ও ড্রেন নির্মাণ করেছি। স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সহযোগিতায় আমি নগরীতে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা এবং ড্রেন করতে সক্ষম হয়েছি। গাজীপুরে হাজারো মিলকারখানা আছে। কোনো কারখানায় একটি টাকাও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি।
এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম, সদস্য কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিশ, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুণ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য রুহুল আমীন, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা মনজুর হোসেন, মহানগর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আ. মজিদ বিএসসি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আ. কাদির মন্ডল, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন আহমেদ শান্ত বাবু, মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি সেলিনা ইউনুস, সাধারণ সম্পাদক ফাহিমা আক্তার হোসনা প্রমুখ কাউন্সিলর ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।সুত্র:জানি