বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুষ্ঠিত (৫টি ব্যাংকের অফিসার ক্যাশ) শুণ্য পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতি করার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ মোক্তারুজ্জামান রয়েল, মোঃ শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহামান মিনল ও রাইসুল ইসলাম স্বপন।
৬ নভেম্বর ২০২১ হতে ১০ নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীসহ আশপাশ এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ১টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের ৫টি মোবাইল, ৪টি প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র ৪টি, WhatsApp এ রক্ষিত উত্তরপত্রের ছবি, ০১ টি প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নগদ ০৬ লক্ষ টাকা উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
আজ বুধবার (১০ নভেম্বর, ২০২১) বিকাল ৩:০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম(বার)।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুষ্ঠিত ০৫টি ব্যাংকের ১৫১১টি ‘অফিসার ক্যাশ’ শুণ্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা গত ৬ নভেম্বর ২০২১ বিকাল ০৩:০০ টা হতে ০৪:০০ টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। আহসানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি পরীক্ষাটি সম্পাদন করে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কাজ করতে থাকা গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্য পায় ০৫ নভেম্বর ২০২১ দিবাগত রাতে এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের একজন সদস্য ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে পরীক্ষার দিন ০৬ নভেম্বর ২০২১ সকাল ০৭:০০ টায় প্রশ্নপত্রসহ উত্তর পাওয়ার জন্য চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে। প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপনকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা হলে পরীক্ষার্থীকে বুথে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। স্বপনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৬ নভেম্বর ২০২১ সাভার শাখার শ্রীনগর থেকে রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলনকে গ্রেফতার করা হয়। জানে আলম মিলনের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডা থেকে মোঃ শামসুল হক শ্যামলকে গ্রেফতার করা হয়। মোঃ শামসুল হক শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস করার কথা স্বীকার করে। এই চক্রের মূল হোতা মোঃ মুক্তারুজ্জামান রয়েলকে বাড্ডার আলিফনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মোঃ মুক্তারুজ্জামান রয়েল আহসানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে ICT টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত আছে। মুক্তারুজ্জামান আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তা উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করেছে বলে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসমীদের দেয়া তথ্য, মোবাইল ফোনে থাকা তথ্য এবং Whatsapp চ্যাটের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর লালবাগ থেকে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলনকে গ্রেফতার করা হয়।
রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যানপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলানগর, পল্লবী এলাকায় বুথ (যেখানে পরীক্ষার ৫/৬ ঘন্টা আগে নিজস্ব লোকের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের ফাঁস করা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হয়) তৈরি করে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক বুথে ২০/৩০ জন পরীক্ষার্থীর উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করিয়ে কেন্দ্রে প্রেরণ করে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকার করেছে বলে গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা জানান।
তিনি আরও বলেন, মুক্তারুজ্জামান ও শ্যামল সুকৌশলে ০৩ বার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁস করেছে। শ্যামল এই চক্র পরীক্ষার ৫/৬ ঘন্টা আগেই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থীদের মাঝে উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহ করেছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী দল সার্চলাইটের সিনিয়র রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল ইমরান এই চক্রের তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তেজগাঁও জোনাল টিমকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করেছেন বলেও তিনি জানান।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম মহোদয়ের নির্দেশনায় এবং তেজগাঁও জোনাল টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাদাত হোসেন সুমা বিপিএম এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।সুত্র:ডিএমপি