ধানক্ষেতে কুঁড়িয়ে পাওয়া জয়কে দত্তক নিতে আগ্রহী সবাই। ফুটফুটে মায়াবী চেহারার নবজাতকের নাম দিয়েছে জয়। আর তাকে দত্তক নিতে এগিয়ে এসেছে অনেকেই। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় আশ্রয় মিলেছে শিশুটির। পরম যত্নে লালন-পালন করা হচ্ছে তাকে। নার্স থেকে চিকিৎসক সবার কোলে ঘুরে বেড়াচ্ছে ধানক্ষেতে কুঁড়িয়ে পাওয়া নবজাতক জয়।
খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ছুটে যাচ্ছেন শিশুটিকে দেখতে। যেন যত্নের কোনো কমতি নেই। অথচ জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে পড়েছিল অভিভাবকহীন এবং ঠিকানাবিহীন। ধানক্ষেতের পিঁপড়া-ময়লায় মাখামাখিতে পড়েছিল বাঁচা মরার সন্ধিক্ষণে। এমন অনিশ্চয়তা থেকে জীবন ফিরে পেল দু’দিনের নবজাতক। যার নাম রাখা হয়েছে জয়।
রোববার (৭ নভেম্বর) নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের আদমপুর এলাকায় খান এন্ড পণ্ডিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি ধানক্ষেত থেকে কুঁড়িয়ে পাওয়া নবজাতক ছেলে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এক কৃষক। এরপর থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে উঠে শিশুটির ঠিকানা। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবিনে পুলিশি প্রহরায় মা ও শিশু চিকিৎসকের পরিচর্যায় রয়েছে শিশুটি।
মৃত্যুকে জয় করে আবারও নতুন জীবনে ফিরে পাওয়ায় শিশুটির নামও জয় রাখার পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে জয় নামটি রাখার প্রস্তাব রেখেছেন।
শুধু প্রশাসন নয়, শিশুটিকে দেখতে সকাল-বিকেল সব সময়ই ভিড় লেগে থাকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। ইতোমধ্যে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব রেখেছে।
এ ব্যাপারে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান জানান, কুঁড়িয়ে পাওয়া শিশুটির জন্য যা যা করা দরকার তা সবাই আমরা করছি। মা বাবা হারা অনাথ শিশুটির বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তার পরিচর্যার জন্য যেসব খাদ্য ও উপহার সামগ্রী দরকার তার সব সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া এই শিশুটির ভবিষ্যতে লালন পালনের জন্য উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়ম মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, যারা শিশুটি দত্তক নিতে ইতোমধ্যে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করে উপযুক্ত দম্পতির কাছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মইন উদ্দিন খন্দকার সবকিছু সমন্বয় করেই এ সিদ্ধান্ত দেবেন। যেহেতু নবজাতকটি মৃত্যুকে জয় করেছে তাই শিশুটির নাম ‘জয়’ রাখার জন্য আমি প্রস্তাব করেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. এবাদুর রহমান জানান, শিশুটি আমাদের অভিজ্ঞ মেডিকেল অফিসার, নার্স এবং আউট সোর্সিং এ কর্মরত মোমেনা খাতুনের কোলে সুষ্ঠু পরিচর্যায় রয়েছে। শিশুটি এখন পুরোপুরি সুস্থ। এই শিশুটির সঠিক যত্ন নেওয়া ও সুস্থ রাখা আমাদের দায়িত্ব। আমরা শতভাগ তা পালন করে যাচ্ছি। সুত্র:সনি