যশোরে চলছে খেজুরের রস আহরণের প্রস্তুতি
শীতের আমেজ আসতে না আসতেই খেজুর গুড়ের রাজধানীখ্যাত যশোরের বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে চলছে রস আহরণের প্রস্তুতি। ইতোমধ্যেই খেজুর গাছ কাটা শুরু করে দিয়েছে।
যশোরের রস-গুড়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে খেজুরের রস ও গুড়কে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে জানান গুড় উৎপাদনকারী একাধিক চাষি।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৫৫টি। এর মধ্যে রস উৎপাদিত হয় এমন খেজুর গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৫টি। এসব খেজুর গাছ থেকে বছরে ৫ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ২৫০ লিটার রস উৎপাদিত হয়। বছরে গুড় উৎপাদিত হয় ৫২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৫ কেজি। যার মূল্য একশ কোটি টাকার উপরে। বর্তমানে জেলার ৮ উপজেলায় গাছির সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৩ জন।
জেলার খাজুরার জয়নাল হোসেন বলেন, এখানকার খেজুর গুড়ের চাহিদা দেশ-বিদেশে সর্বত্র রয়েছে। দুই দশক আগেও খাজুরা অঞ্চলে প্রচুর খেজুরের গাছ ছিল। বর্তমানে আগের তুলনায় গাছ অনেকটা কমে গেছে। সরকারি উদ্যোগে নতুন করে খেজুরের চারা গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়ায় গাছিদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
একই এলাকার অপর গাছি লিয়াকত আলী জানান, যশোরের গুড়ের চাহিদা দেশের সর্বত্র। স্থানীয় বাজারে এক ভাড় খেজুর রস একশ’ থেকে দেড়শ টাকায় এবং এককেজি বিশুদ্ধ গুড় ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বিশুদ্ধ খেজুর রস-গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জেলার ৩০ জন গাছিকে ঈশ্বরদী থেকে বিশেষজ্ঞ এসে তিনদিনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গত শনিবার (৫ নভেম্বর) থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে, চলবে সোমবার (৮ অক্টোবর) পর্যন্ত। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া গাছিদের আধুনিক পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিশুদ্ধ গুড় উৎপাদন পর্যন্ত যে যে উপকরণ লাগবে তা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। সারা দেশের মধ্যে যশোরে এ ধরনের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও গাছিদের মধ্যে উপকরণ সরবরাহের উদ্যোগ এ প্রথম বলে তিনি জানান।
এ জেলার খেজুর গুড়ের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বেশি থাকায় এখানে বিশুদ্ধ গুড়ের বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।