ভারতের সীমান্তে থাকা ফেনসিডিল কারখানাগুলোর তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী সীমান্তে যেসব কারখানা পাওয়া গেছে, ভারত সরকার সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুস সবুর মন্ডল।
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) মহাপরিচালক পর্যায়ে অনলাইন প্লাটফর্মে ভার্চুয়ালি ৭ম দ্বিপাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেগুনবাগিচা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুস সবুর মন্ডল।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে মাদক পাচারের নতুন নতুন রুট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কিছু তথ্য দিয়েছি। তারাও আমাদের কিছু তথ্য দিয়েছে। দুই দেশের সীমান্ত থাকায় উভয় দেশের আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ববহন করে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য দুই দেশই ভূমিকা রাখবে। ইয়াবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারতের কিছু অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হয়। সেটিও ভারতকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সম্প্রতি মাদকপাচারে সমুদ্রপথ ব্যবহার করা হচ্ছে এটি গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমুদ্রপথে ইয়াবা পাচার বেড়েছে। কারণ স্থলপথগুলোতে কড়াকড়িতে হয়তো সমুদ্রপথে আসছে। ইয়াবার তুলনায় আইস আরও বেশি তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ বিষয়ে উভয় দেশ তৎপর বলেও জানান ডিজি।
গত কয়েকটি সম্মেলনে ভারতে তাদের সীমান্তে থাকা ফেনসিডিল কারখানার তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। তালিকা অনুযায়ী যেসব কারখানা পাওয়া গেছে, ভারত সরকার সেগুলো বন্ধ করেছে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়।
মহাপরিচালক বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে মাদক সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে। ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ভারতও এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
মিয়ানমার সরকার মাদক বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। নিলে এই হারে মাদক আসতো না বলে মন্তব্য করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মন্ডল। তবে মাদক চোরাচালান বন্ধে ভারতের উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উভয় দেশই বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংস্থার (বিমসটেক, সার্ক, কমনওয়েলথ ইত্যাদি) সদস্য। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এবং ভারত মাদকদ্রব্য চোরাচালান এবং মাদক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করছে, যার অংশ হিসেবে ইতোপূর্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো।
আজকের সভায় উভয় পক্ষই সমুদ্র পথকে ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান এবং সন্ত্রাসীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন রুট সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতিমালা ও বিধি-বিধান নিয়ে তথ্য বিনিময়, ফলপ্রসূ অপারেশনের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময়, মাদক বিষয়ক প্রাসঙ্গিক অপরাপর সম্যক তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ক্ষেত্র উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেই বিষয়ভিত্তিক তথ্য উপস্থাপন করা হয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে মাদক নিয়ন্ত্রণে দুই দেশ কীভাবে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।