1. nagorikkhobor@gmail.com : admi2017 :
  2. shobozcomilla2011@gmail.com : Nagorik Khobor Khobor : Nagorik Khobor Khobor
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
রানা, ও মেহেবুব হোসেন রিপনের নেতৃত্বে এক বিশাল র‍্যালি গোপালগ‌ঞ্জে দিনমুজুর‌কে হত্যা মামলায় গ্রেফতার, নবজাতক দুই বোন নিয়ে দিশেহারা ছোট ভাই শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ কর‌তে হ‌বে, না করলে প্রশাসক নিয়োগ হ‌বে- সাখাওয়াত বাংলাদেশ থেকে জাপানি সৈন্যদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে নিবে আজারবাইজানে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সিপিজের খোলা চিঠি ড. ইউনুসকে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম গ্রেফতার শপথ নিলেন নতুন তিন উপদেষ্টা কু‌মিল্লায় ডাকাতির নাটক সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ক‌রে চাচা রাজধানীর কাকরাইলে সভা সমা‌বেশ নি‌ষিদ্ধ

ফ‌টিকছ‌ড়ি‌তে ছে‌লের মামলার তদন্ত পিবিআই‌তে জে‌নে বাবা‌কেও খুন- গ্রেফতার ৩

নাগ‌রিক অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১
  • ৮‌৩ বার পঠিত

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির যুবক ফকির আহম্মদ (৩৩)কে  লিজের জমি দখল ও বিরোধের জেরে খুন করা হয়েছিল। কিন্তু হত্যার পর ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা’ তাকে খুন করেছে- এমন গুজব ছড়ান আসামিরা। এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ একবছরেও থানা পুলিশ কোনো কুল-কিনারা করতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে নিহত ফকিরের বাবা ও হত্যা মামলার বাদী এজাহার মিয়া (৭০) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে তদন্তের জন্য যেতে চান। আর এই খবর পাওয়ার পর তাকেও হত্যা করেন একই দুষ্কৃতকারীরা। তবে শেষমেশ পিবিআইয়ের হাতেই গ্রেফতার হন এই জোড়া খুনের মূল হোতারা।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) খাগড়াছড়ির লক্ষাছড়ি বাজার ও ফটিকছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দিনভর অভিযান চালিয়ে বাবা-ছেলের খুনে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।গ্রেফতাররা হলেন- মো. ফিরোজ (৩৮), মো. সালাহ উদ্দিন ওরফে মন্নান (২৮) ও মো. এখলাস (৩৮)। তাদের সবার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায় বলে জানা গেছে। আসামি এখলাস এজাহার মিয়ার বড় মেয়ে চম্পার স্বামী। এছাড়া বাকি দুই আসামি ফিরোজ ও সালাহ উদ্দিন নিহতদের নিকটাত্মীয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে সালাহ উদ্দিন বুধবার চট্টগ্রাম অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াসমিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া একই আদালত অপর দুই আসামি ফিরোজ ও এখলাসকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জোড়া খুনের ঘটনার দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল আব্বাস।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ৯ একরের লিজের একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর খুন হন ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফকির আহম্মদ। ঘটনার দিন তিনি একটি দোকানে সিগারেট কিনতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। পরদিন তার গলাকাটা মরদেহ পাওয়া যায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী দুইদ্যা খালে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা এজাহার মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ফটিকছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্তু হত্যার পর আসামিরা গুজব ছড়াতে থাকেন- পাহাড়ি এক মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা’ ফকিরকে হত্যা করেন।

এদিকে, দীর্ঘদিন ফকির হত্যাকাণ্ডে তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখতে না পেয়ে বৃদ্ধ বাবা এজাহার মিয়া মনস্থির করেন, মামলাটি নিয়ে তিনি পিবিআইয়ের কাছে যাবেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে, একপর্যায়ে আসামিরা তা জেনে যান। আবার এর আগে একই এলাকায় ঢাকা থেকে তক্ষক কিনতে এসে নিখোঁজ হওয়া হেলাল উদ্দিন (৩৭) হত্যা মামলার মামলার রহস্য উন্মোচন করায় আসামিদের মধ্যে পিবিআই ভীতি কাজ করতো। তাদের ধারণা, পিবিআই যেকোনো মামলার রহস্য উন্মোচন করতে পারে।

একইভাবে ফকির হত্যা মামলাটিও যদি কোনোভাবে পিবিআইয়ের হাতে যায়, তাহলে আসামিরা ফেঁসে যাবেন। এমন ধারণা থেকে ফকির হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে যাতে দৌড়াদৌড়ি করতে না পারে, এজন্য এজাহার মিয়াকেও গত ২৪ জুন হত্যা করা হয়।

ঘটনার দিন এজাহার মিয়া তার আরেক ছেলে ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে বাড়ির পাশের জমি চাষাবাদ করতে যান। ইসমাইল হোসেন গরু চড়াতে থাকেন, একই সময়ে এজাহার মিয়ে ধানের বীজতলায় চাষাবাদ করতে থাকেন। সন্ধ্যায় ইসমাইল গরু নিয়ে বাড়ি ফিরলেও তার বাবা এজাহার মিয়া আর ফেরেননি। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘটনার পরদিন ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের একটি ঝোপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, বাবা-ছেলে জোড়া খুনের পর নড়ে-চড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন।পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে এজাহার হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট।

ইউনিটটির পুলিশ সুপার নাজমুল হাসানের নির্দেশনায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন এসআই কামাল আব্বাস। তদন্তের শুরুতে তিনি ঘটনার বিষয়ে গুপ্তচর নিয়োগ করেন। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও করা হয়। তদন্তের কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি হত্যা মামলার আসামিদের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন এবং মাত্র ২০ দিনের মাথায় জোড়া খুনে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেফতার করেন। এদের মধ্যে এক আসামি ঘটনার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামাল আব্বাস বলেন, তদন্তের শুরুতে ভিকটিম এজাহারের মেয়ের জামাই এখলাসকে শনাক্ত করা হয়। পরে আরেক ভিকটিম ফকিরের সঙ্গে আগে থেকে বিরোধের তথ্য পেয়ে মন্নানকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল (মঙ্গলবার) খাগড়াছড়ির পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে মন্নানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ফিরোজ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানান। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আসামি ফিরোজ ও এখলাসকে গ্রেফতার করা হয়।

জানতে চাইলে পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, লিজের জমি দখলকে কেন্দ্র করে ফকিরকে হত্যা করা হয়। এরপর তাকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা খুন করেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। কিন্তু মামলার বাদী ও ভিকটিমের বাবা পিবিআইয়ের দ্বারস্থ হবেন- এমন সংবাদে পেয়ে এজাহার মিয়াকেও হত্যা করা হয়। এজাহার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে জোড়া খুনের নেপথ্যের আসামিকে আমরা পেয়ে যাই। বর্তমানে দুটি মামলা আমরা তদন্ত করছি। এ ঘটনায় জড়িত এখন পর্যন্ত মোট আটজনের তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুজনকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। আমরা ঘটনার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

নিহত এজাহারের স্ত্রী ও ফকিরের মা নাছিমা বেগম বলেন, আমরা থানায় গেলে তারা বলতেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাদেরকে হত্যা করেছে। আসামিদের মধ্যে থানা পুলিশ আমার মেয়ের জামাই এখলাসকে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ একবছর তারা কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি। শেষপর্যন্ত পিবিআই মাত্র ২০ দিনে আসামিদের গ্রেফতার করেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 nagorikkhobor.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com