ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের কথা আমাদের কাছে ‘রহস্যময়’ মনে হয়েছে— এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশিদ। গোয়েন্দা কার্যালয়ে মুসা বিন শমসের ও তার স্ত্রী-সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মুসা বিন শমসের প্রতারক কাদেরকে তার আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে ২০ কোটি টাকার চেক দিয়েছেন। তাকে ‘বাবা, সোনা’ বলেও ডাকতেন বলেও জানান হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, উনাকে (মুসা বিন শমসের) আমরা বারবার জিজ্ঞেস করেছি। আব্দুল কাদের নামের একজন অষ্টম শ্রেণি পাস ব্যক্তিকে কীভাবে এত বড় কোম্পানির উপদেষ্টা বানালেন? সে তো ওই পরিচয় দিয়েই লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।
হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দেওয়া আব্দুল কাদের ১০ কোটি টাকা মুসার কাছে বিনিয়োগ করলো। তাকে মোট ২০ কোটি টাকাই ফেরত দেন মুসা। ১০ কোটি বিনিয়োগে কি এক মাসে ১০ কোটি টাকা লাভ হতে পারে? এর উদ্দেশ্য কী তা আমরা এখনও জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে মুসা বিন শমসের দাবি করেছেন তিনি কাদেরের প্রতারণার বিষয়ে কিছু জানেন না।
মুসা বিন শমসেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করলাম। তিনি দাবি করলেন, সুইস ব্যাংকে তার আট হাজার ২০০ কোটি ডলার আছে। কিন্তু সেই টাকার কাগজপত্র কেন কাদেরের কাছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মুসা গোয়েন্দাদের বললেন, তিনি সরল মনেই তার কাগজপত্র কাদেরের কাছে দেন। বিষয়টি পুঁজি করে কাদের মুসার নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করতো।’ -জানালেন যুগ্ম-কমিশনার হারুন।
তবে মুসা এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না বলে মনে করেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মুসা বিন শমসেরের বরাত দিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, মুসা বিন শমসেরের সামনে বসেই বিভিন্ন সময় উচ্চপদস্থ লোকজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতো প্রতারক আব্দুল কাদের। কাদের সঙ্গে কথা বলতো সে বিষয়গুলো ভ্যারিফাই করার দরকার ছিল মুসা বিন শমসেরের। তিনি তা করেননি।
মুসা নিজেও বলেছেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। মামলা করবেন। আমরা সব তদন্ত করছি। তিনি (মুসা) যদি মামলা দায়ের করেন সেটাও খতিয়ে দেখবো।
ডিবি কার্যালয়ে আসার সময় কেন মুসার সঙ্গে দেহরক্ষী ছিল না এমন প্রশ্নের জবাবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমরা বলে দিয়েছিলাম যেন কোনও নিরাপত্তারক্ষী না নিয়ে আসেন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহায়তায় গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার প্রতারককে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। তারা হলো, আব্দুল কাদের চৌধুরী, শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, শহিদুল আলম ও আনিসুর রহমান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুল কাদের চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নবম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তিনি অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। রাজধানীর গুলশানে জব্বার টাওয়ারে তার একটি কার্যালয় রয়েছে। সেখানে বসেই তিনি বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করানোর জন্য সহযোগীরা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা নিতেন।
আব্দুল কাদেরের প্রতিষ্ঠানে মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে তার একাধিক ছবি টানানো রয়েছে। মুসা বিন শমসরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে সমস্যা হবে না বলে প্রতারণা করতেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক আব্দুল কাদের চৌধুরীর কাছ থেকে মুসা বিন শমসের ও তার স্ত্রীর সঙ্গে করা কিছু চুক্তিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া মুসা বিন শমসেরের সঙ্গে তার ২০ কোটি টাকা লেনদেনের কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। কীসের ভিত্তিতে এসব লেনদেন করা হয়েছে তা জানতেই মূলত মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।সুত্র:বিট্রি