বাংলাদেশের প্রবাসীদের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) যাত্রা স্বাভাবিক হয়েছে। গত ৯ দিনে বিমানবন্দরে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১০ হাজারের বেশি প্রবাসীকর্মী ইউএই গেছেন।
কিছুদিন আগেও যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে প্রত্যেক যাত্রীর করোনার নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে ইউএই সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। ফলে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীকর্মীসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ইউএইগামী যাত্রীদের বিদেশযাত্রায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ তখনো পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিল না।
তবে সমস্যা সমাধানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ছয়টি আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপিত হয়।
শুরুর দিকে কিছুটা অব্যবস্থাপনা থাকলেও বর্তমানে প্রবাসীকর্মীসহ যাত্রীরা খুব সহজেই যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে করোনার নমুনা পরীক্ষা করে বিদেশ যেতে পারছেন। প্রবাসীকর্মীদের জন্য নমুনা পরীক্ষার ফি-তে জনপ্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর ফলে আমিরাতগামী কর্মীদের করোনা পরীক্ষায় কোনো টাকা লাগছে না।
এদিকে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে প্রবাসীকর্মীদের মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের অনেকেই বলেছেন, বিমানবন্দরে দ্রুত ল্যাব স্থাপন ও নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করে সরকার তাদের মতো হাজারও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। এ জন্য তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট হেলথ ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ইউএই গেছেন ১০ হাজার ৫১ জন। এছাড়া আটজন যাত্রী করোনা পজিটিভ হওয়ায় যেতে পারেননি। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১ হাজার ৯৪৪ জন ইউএই যান। এ সময় নমুনা পরীক্ষায় একজন করোনা পজিটিভ হওয়ায় তিনি যেতে পারেননি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা করিয়ে যারা আরব আমিরাত গিয়েছেন তাদের মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর ৬৫ জন, ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৪১ জন, ১ অক্টোবর ৬৮৮ জন, ২ অক্টোবর ৯৯৫ জন, ৩ অক্টোবর ১ হাজার ২৮০ জন, ৪ অক্টোবর ১ হাজার ৬৭৩ জন, ৫ অক্টোবর ১ হাজার ৬৫ জন, ৬ অক্টোবর ২ হাজার জন এবং ৭ অক্টোবর ১ হাজার ৯৪৪ জন রয়েছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে গত আগস্টে আমিরাত তাদের দেশে যেতে হলে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে যাওয়ার শর্ত আরোপ করে। কিন্তু তখনো পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে কোনো আরটি-পিসিআর ল্যাব ছিল না। ফলে হাজার হাজার প্রবাসীকর্মীর ইউএই যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসীকর্মীরা মিটিং, মিছিল ও সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের কাছে প্রতিকারের দাবি জানান। তখন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য মোট সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করে তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড, ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ও জয়নুল হক সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। বর্তমানে ল্যাবগুলোতে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে করোনার নমুনা পরীক্ষা করে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ইউএই যেতে পারছেন।