আজ শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএমর) মাধ্যমে এ উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের গণমাধ্যমকে জানান, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বত্র আলোচনা চলছে। করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে ভোটের দিন কি পরিমাণ ভোটার উপস্থিত হন বা জয়ের মালা কার গলায় শোভা পাবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। কোনো কোনো ভোটার জানালেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে লাঙ্গল ও নৌকার মধ্যে। নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোটগ্রহণের দিন কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে থাকবে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশ ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবেন। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন।
এই আসনটিতে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হাবিবের পক্ষে মঙ্গলবার সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আতিকের পক্ষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রচারণা চালান। বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী তৃণমূল নেতাদের নিয়ে প্রচারণা চালান।
ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি: সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি। চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনায় এ আসনটির সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। শূন্য আসনটিতে ৮ জুন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করে ইসি। সেই তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ জুলাই এই আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এর দুই দিন আগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন আদালত। পরবর্তীতে ৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোটের পরদিন রবিবার পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ-এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনকালে সকল অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সমন্বয়ে ২ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
নির্বাচন কমিশন গঠিত এ কমিটিতে রয়েছেন সিলেটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তাসলিমা শারমিন ও সিনিয়র সহকারী জজ নির্জন কুমার মিত্র। এছাড়া, আসনটির ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়াকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, অঞ্জন কান্তি দাসকে বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বাচনের আগের দুইদিন, পরের দুইদিন অর্থাৎ, ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫ দিন নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটগ্রহণের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।