কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউপি চেয়ারম্যানের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর অস্ত্রের মহড়া ও যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা, থানায় পুলিশের নিকট হামলার ভিডিও ফুটেজ , সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে মাদ্রাসার মাঠ দখল করে চলছে ফুটবল খেলা, ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগীরা
কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউপির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অস্ত্রের মহড়া ও যুবককে গুলি এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসার মাঠ দখল করে অবৈধভাবে ফুটবল খেলা চালানোর ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। থানায় অভিযোগের পর পুলিশ অস্ত্র মহড়ার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করলেও এসব ঘটনায় থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। উল্টো থানায় অভিযোগ করায় আবারও যুবকের উপর হামলা করা হয়। অপর ঘটনায় থানায় অভিযোগকারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায় ।
থানায় অভিযোগ,জিডিসহ স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা যায়, বরুড়া উপজেলার ৩নং খোশবাস ইউপির একটি ওয়ার্ডের জাতীয় পার্টির সভাপতি মফিজুল ইসলামের পুত্র নাজমুল হাসান সরদার। নাজমুল হাসান সরদার গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী এই চেয়ারম্যান পরবর্তীতে স্থানীয় দশ পনের জন যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলেন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীর এক সদস্যের সাথে ফেসবুকে কথা কাটাকাটি হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক মোশারফ হোসেনের সাথে।
এর জের ধরে গত ২৩ জুলাই শুক্রবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে এগারটার সময় চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন তার দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে অগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দিয়ে গুলি চালায় মোশারফ হোসেনের উপর। এ ঘটনায় আহত মোশারফ হোসেন থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসির নির্দেশে একটি জিডি করেন , বরুড়া থানার জিডি নং ১২৮৬, তাং ২৫.০৭.২১ইং। পরবর্তীতে থানায় এই জিডির খবর জানতে পেরে মোশারফ হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন চেয়ারম্যান নাজমুল। পরিকল্পনা অনুযায়ি চেয়ারম্যান নাজমুলের নির্দেশে তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম সদস্য হত্যা মামলার পলাতক আসামি সোহেল সঙ্গীয় আকবর, খোরশেদ ও জুয়েল দা ছেনি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খোশবাস বাজারে ঢুকে প্রকাশ্যে হামলা চালায় মোশারফ হোসেনসহ জিডির স্বাক্ষী আমীরের উপর। উক্ত হামলার ঘটনাটি অলিতলা দরবার শরীফ কর্তৃক স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও হামলার ভিডিও ফুটেজ পীর মহীউদ্দিন লতীফের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। পুনরায় হামলার ঘটনায়ও থানায় এখনও মামলা হয়নি।
অপরদিকে, অলিতলা ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ গত ৮ আগস্ট চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সরদারসহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগে বলা হয়, মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের লিখিত আদেশে মাদ্রাসা মাঠে খেলাধুলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। খেলাধুলার জন্য মাদ্রাসার গেট খুলে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান নাজমুল মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গেট খুলতে পারবে না বলে জানালে, অধ্যক্ষকে হুমকী প্রদান করেন চেয়ারম্যান নাজমুল। একপর্যায়ে চলতি মাসের ৮ আগস্ট চেয়ারম্যান নাজমুল তার দলবল নিয়ে মাদ্রসার গেইট, দেয়াল ভাংচুর করে মাঠে প্রবেশ করে ফুটবল খেলা চালু করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহসিন রেজা বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কিংবা অন্য কোথাও কোন প্রকার অভিযোগ দিলে তার ক্ষতিসাধন করবে বলে হুমকী প্রদান করেন চেয়ারম্যান নাজমুল। বিষয়টি বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহসীন রেজা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সরদারসহ তার চার সহযোগীর নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।
এই বিষয়ে চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সরদার এবং বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদারকে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
এ দিকে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন ও তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ ভুক্তভোগীরা। আ/স