রাজনীতির ব্যানার পরিবর্তনে বড় আশা নিয়ে মঙ্গলবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা-১৪ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়েছিলেন আলোচিত অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। অনুগত আর অনুসারীদের ছোট্ট জটলা নিয়ে অবস্থান করেন কার্যালয়ের বাইরে। ফরম কেনার নিয়ম জানতে এক অনুসারীকে পাঠান কার্যালয়ের ভেতরে। তিনি ফিরে এসে জানান, ফরম নিতে হলে দলের পরিচয়ের কোনো প্রমাণপত্র থাকতে হবে। অথবা দলের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এমন কিছুর সংশ্লিষ্টতা দেখাতে হবে।
সঙ্গে সে রকম কোনোকিছু না থাকায় অনুসারীদের নিয়ে ফিরে যান কার্যালয়ের বাইরে থেকেই। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মূলত প্রশ্নের মুখোমুখি এড়াতে ফরম না কিনেই ফিরে যান মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
আগামী ১৪ই জুলাই ওই আসনে নির্বাচন হবে। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। তাই দলের নিয়ম মেনে ফরম কিনতে উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার রাজধানীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগ নামের এক সংগঠনের বর্ধিত সভায় অতিথি হিসেবে অংশ নেন। পেছনে ব্যানার রেখে অতিথির আসনে বসে বক্তব্য দেন। অনুগত ও অনুসারীরা ওই অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও প্রচার করেন।
এ প্রসঙ্গে মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেন, মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। কিছু কারণে ওইদিন ফরম কেনা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে যাবো ফরম কিনতে। দলের কয়েক নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব বিষয়ের কারণে ফরম কিনি নাই সেসব কারণের সমাধান হয়েছে। আশা করি, আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন ফরম দেবে। এদিকে ধানমণ্ডি কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাপ্তরিকভাবে আমাদের সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি। দলে অনেক স্তরের নেতা রয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো উনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করতে কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানসিকতার লোক। এ ছাড়া দলের অনুগত কিংবা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভূমিকা রেখেছেন এমন ব্যক্তি। যারা এসব ইমেজের বাইরে তাদের মনোনয়ন ফরম দিলে স্থানীয় পর্যায়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। বিভেদ তৈরি হতে পারে। প্রসঙ্গত এর আগে আওয়ামী লীগে কখনোই দলীয় কোনো পদে না থাকায় ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলতে পারেননি ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এখলাস উদ্দিন মোল্লা এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। মঙ্গলবার (৮ই জুন) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলতে এলে তাদেরকে তা দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে সায়েম খান গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে এখলাস উদ্দিন মোল্লা তার সহকর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে আসেন।
এ সময় ফরম বিতরণের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা এখলাস মোল্লার কাছে জানতে চান আপনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোনো পদে আছেন কিনা অথবা প্রাথমিক সদস্যপদ পূরণ করেছেন কিনা। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তার কাছে দেখতে চান। তিনি সে কাগজ দেখাতে না পারায় তার কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়নি। তখন তিনি দলীয় অফিস থেকে বের হয়ে যান। মনোয়ার হোসেন ডিপজল এবং এখলাস উদ্দিন মোল্লা দু’জনেই পূর্বে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবরের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
তিনি ফাহিম শুটিং স্পট, এশিয়া সিনেমা হল, পর্বত সিনেমা হল, জোবেদা ফিল্মস, পর্বত পিকচার্স-২, ডিপজল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত ৩৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা-১৪ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড ঢাকা-১৪ আসনের আওতাধীন। জাতীয়ভাবেই আসনটির গুরুত্ব অনেক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসলামুল হক আসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থী এসএ খালেককে পরাজিত করেছিলেন।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি নৌকার মাঝি হয়ে সংসদে যান। এই আসনের এমপি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসলামুল হক গত ৪ঠা এপ্রিল মারা যান।