দেশে চীনের সিনোফার্মের টিকা আজ প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার ৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেয়া হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন শুরুর দিকে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সরকারি আরো ৩৩টি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ছাত্রছাত্রীরা এই টিকা পাবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা শুরুর দিকে এই টিকা পাচ্ছেন না।কোভিড চিকিৎসায় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্স সংকট মেটাতে তাদের সুরক্ষার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদেরও টিকা প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, চীন সরকার থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা মেডিকেল শিক্ষার্থী, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে যারা পড়াশোনা করছেন তারাই পাবেন। মহাপরিচালক বলেন, সিনোফার্মের টিকা প্রয়োগ শুরু করবো ২৫শে মে থেকে।
আমরা ৩৭টা মেডিকেল কলেজে পর্যায়ক্রমে এ টিকা দেয়াটা শুরু করবো। প্রথমে শেষ বর্ষের পরে ধাপে ধাপে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে। এই টিকা আমরা দিচ্ছি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের। ইতিমধ্যেই আমাদের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেয়া শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে শিক্ষার্থীরা। খুরশীদ আলম বলেন, গত এক বছর ধরে মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস পরীক্ষা হচ্ছে না। জুনিয়র চিকিৎসকরা যে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন তাদের এই টিকা দেবো। এখন যদি চিকিৎসক পেতে হয়, তাহলে আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নিতে হবে। আর পরীক্ষা নিতে গেলে আগে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে। তাই এই টিকা আমরা সাধারণ জনগণকে দিতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, যেসব মেডিকেল কলেজগুলোতে টিকাকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে এসব টিকা পৌঁছে যাবে। বাইরের টিকা কেন্দ্রগুলোতে এই টিকা যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরো বলেন, আপাতত বেসরকারি মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা টিকা পাচ্ছেন না। তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রধানরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে যাচাই-বাছাইয়ের পর টিকা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে পারেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলেন, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের শিক্ষার্থী, নার্সিং শিক্ষার্থী এবং মেডিকেল টেকনোলজি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।তবে এসব প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখের কম। বাকি টিকা কাদের দেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
টিকা নিয়ে দেশে নানা ধরনের তৎপরতা যখন চলছে তখন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা টিকার মজুত দেশে প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা টিকা দেশের সব জেলায় জনসংখ্যার অনুপাতে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। প্রথম সারির কর্মী ও ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিলেন। কিন্তু চীনের উপহারের টিকার ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। এই টিকার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। চীন বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ টিকা দিয়েছে। এর মধ্য থেকে ৩০ হাজার টিকা তারা চেয়েছে এ দেশে থাকা ও কাজ করা চীনা নাগরিকদের জন্য।
এর আগে গত ১২ই মে চীন থেকে করোনাভাইরাসের ৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসে। চীন বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ব্যাচে আরো ছয় লাখ ডোজ করোনা টিকা উপহার দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪০ লাখ ৫০ হাজার ৩৭৫ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় মিলে টিকা পেয়েছেন ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৬ ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিতরণ করা টিকা বাদ দিলে হাতে মজুত আছে মাত্র ৩ লাখ ২৯ হাজার ৬২৪ ডোজ। ঘাটতি টিকার পরিমাণ ১৪ লাখ ৪০ হাজার ২ ডোজ। এ ছাড়া টিকা প্রয়োগের সময় কিছু অপচয় বা নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে যে টিকা আছে তা দিয়ে প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হবে না। দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকবেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। আরো নিবন্ধন করে এখনো এক ফোঁটা টিকা পাননি এমন সংখ্যাও ১৪ লাখের বেশি। এ পর্যন্ত দেশে মোট প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১ জন।
অন্যদিকে অনলাইনে নিবন্ধনও ২রা মে’র পর থেকে বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। প্রসঙ্গত, গত ২৭শে জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে। আর দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয় ৮ই এপ্রিল থেকে। দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা এবং উপহার পাওয়া মিলে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ।