ভাবছি শেষ বয়সে একটা বৃদ্ধাশ্রম বানাবো!
বঙ্গ দেশে অবশ্য বৃদ্ধাশ্রম কে অবজ্ঞা অর্থেই দেখা হয়!
যদিও আমি বৃদ্ধাশ্রমে খারাপ কিছু দেখিনা
যদি সেখানে পুরোনো বন্ধুকে কাছে পাওয়া যায়
তাই নামটা দিব ভাবছি “আনন্দ আশ্রম”।
প্রকৃতির নিয়মেই মানুষ বৃদ্ধ হয়
এবং বৃদ্ধ মানুষ সাধারণত প্রচুর কথা বলতে চায়।
আমি অনেককে দেখেছি
যারা যুবক থেকে মধ্য বয়সে মারাত্মক গুরুগম্ভীর ছিলেন
অথচ বৃদ্ধ বয়সে তারা প্রচুর কথা বলতে চায়
মানুষের সাথে ভাব জমাতে চায়!
কিন্তু মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রাণী
জীবন সায়াহ্নে পৌছেছে যে
তার স্বাভাবিক কথায়ও বিরক্ত হয়।
একজন বৃদ্ধ মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই
অবঙ্গার পাত্র হয়।
আর আমি তো এখনই বেশি কথা বলি
আমি ভাবি বৃদ্ধ বয়সে আমার কথা শুনবে কে?
তখন আমার কথা কেউ যে শুনছে না
মরে য়াবার জন্য এই অবহেলা টুকুই যথেষ্ট।
এই একবিংশ শতাব্দীতে
সংসারে ছেলে মেয়ে বউ নাতি নাতনী সকলেই এত বেশি ব্যস্ত! যে,
প্রৌঢ় মানুষটার সাথে কথা বলার মতোও কোন সময় কারো নেই
বরং তার কথা শুনতেই সবাই যেন বিরক্ত !
তাই আমি ভাবছি
একটা মডেল “আনন্দ আশ্রম” বানাবো
যেখানে সকল বন্ধুদের কে নিয়ে আসবো
যারা আসতে চায়
এমনকি যারা আসতে না চায়
তাদেরকেও মাঝে মাঝে দাওয়াত দিব।
ধারনা করি, একবার আনন্দ আশ্রমে আসলে
আর কখনো ফিরতে চাইবে না
কারণ এখানেই খুঁজে পাবে জীবন।
ভাবুন তো বৃদ্ধ বয়সে সংসারের চক্ষুশূল
না হয়ে
বা ধরলাম সবাই আপনাকে পছন্দই করে তারপরও
সকল বন্ধুরা মিলে বৃদ্ধাশ্রমে থাকলাম
আড্ডা হলো, দাবা খেলা, লুডু খেলা, একসাথে জামাতে নামাজ পড়া, পুজা অর্চনা, সবকিছু হবে।
একসাথে ছাদে বসে জ্যোৎস্না দেখবো
কবিতা পাঠের আসর হবে।
ভাঙা ভাঙা কন্ঠে কেউবা রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে উঠবে!
আহ কী জীবন!
প্রথম জীবনে কার প্রেমে পড়েছিলাম
কার চোখে স্বপ্ন দেখেছিলাম!
শৈশবের, কৈশোরের, স্মৃতিচারন
এমনকি আপনার যে প্রেমিকার অন্য বন্ধুর সাথে বিয়ে হয়েছিল
তারাও হয়তো থাকবে আনন্দ আশ্রমে
কী দারুণ! একটা ব্যাপার ভাবুন তো
বিরাট একটা দিঘি থাকবে আশ্রমে
ঘাটে বসে পুরোনো প্রেমিকার সাথে বসে
শান্ত জলে মাছের লুকোচুরি দেখছেন।
একটা নির্মল হাওয়া এসে আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কোন শীতের কুয়াশায়াচ্ছন্ন সকালে
মাঠের পর মাঠ সরিষা ক্ষেত,
গমের ক্ষেতের ডগায় ডগায় হাত বুলিয়ে হেটে চলেছেন!
শেষ জীবনের দিনগুলো তো এমনই হবার কথা তাই না?
হাসি, আনন্দ দুঃখ, কষ্ট সবকিছু বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিবো।
অপর দিকে পরিবারের সবাই থাকবে স্বাধীন
আমাদের নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
তারাও দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবে!
মাঝে মাঝে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের আশ্রমে বেড়াতে যাবে।
আর আমরাও আনন্দ আশ্রমের সবাই মিলে বিরাট কোন জাহাজে করে সমুদ্র স্নানে যাবো।
আমার আনন্দ আশ্রমে বন্ধুদের স্বাগতম।
লেখক:
✍️রুবায়েত হোসেন।